-স্টাফ রিপোর্টার
নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস আগেই উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উৎক্ষেপণ করতে হবে। সরকার ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শনিবার উৎক্ষেপণের দিন নির্ধারণ করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এজন্য প্রধান তিনটি কাজ-মহাকাশে স্লট কেনা, পরামর্শক নিয়োগ ও স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা শেষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০শে অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান থেলাস এলিনিয়া স্পেস। এর আগে বিটিআরসি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট ইজারা নিতে চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে কয়েক কিস্তিতে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দেবে বিটিআরসি। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এদিকে নির্ধারিত দিনে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কোনভাবে যেন ব্যর্থ না হয় সেজন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণত রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট পাঠানো হয় মহাকাশে। অনেক সময় রকেট উৎক্ষেপণের আগে-পরে কিংবা অন্য যে কোন কারণে বিগড়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কোন ঝুঁকি নিতে চাই না বাংলাদেশ। বিকল্প হিসেবে আরও একটি অতিরিক্ত রকেট মজুত রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি ব্যর্থ হলে আরেকটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এজন্য ওই প্রকল্পে ব্যয় কিছুটা বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বিদায়ী চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, একটি রকেট ব্যর্থ হলে সাধারণত আরও ৬ মাস সময় লাগে পরবর্তী রকেটের জন্য। আমাদের হাতে সময় খুব কম। তাই খরচ বাড়লেও বিকল্প হিসেবে বাড়তি একটি রকেট হাতে রাখা হচ্ছে। স্যাটেলাইটসহ একটি রকেট উৎক্ষেপণের জন্য সাধারণত ব্যয় হয় চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে হবে। তা নাহলে কোন লাভ নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় করবে থেলাস এলিনিয়া স্পেস। বিটিআরসি জানিয়েছে, সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। সংস্থাটির হিসাব মতে, শুধু সমপ্রচার কার্যক্রমের জন্যই বছরে ১১০ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিজস্ব উপগ্রহ থাকলে টাকাগুলো দেশেই থাকত। নতুন উপগ্রহ চালু হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে না, অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোর কাছে ভাড়া দিয়ে বছরে বড় অংক আয় করা যাবে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিশাল এ প্রজেক্ট কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের যেন বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি না হয় সেদিকটি বিবেচনা করে ইন্স্যুরেন্স করা হয়েছে। মহাকাশের বিভিন্ন রেখায় স্থাপন করা ৬৯টি দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও সমপ্রচার এবং গোয়েন্দাগিরির কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশী ৫টি স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশের মহাকাশে নিজস্ব স্পেস রয়েছে। তাদের আকাশে অন্য কোন দেশের স্যাটেলাইট নেই। ৫০টি দেশ অন্য দেশের সহযোগিতায় স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। ১১টি দেশ নিজস্ব ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এসব দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট বিষুবরেখা, মেরুবিন্দু বা ক্রান্তীয় অঞ্চল অথবা বিভিন্ন কৌণিক পথে পরিভ্রমণ করছে। যোগাযোগ মাধ্যমের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করা হয়। কক্ষপথের এই স্থানে স্যাটেলাইট স্থাপন করলে পরিচালন ব্যয় অনেক কম হয়। তাই উন্নত দেশগুলো এই কক্ষে একটার পর একটা যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর নিজস্ব জমিতে দু’টি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
Source