-ফারুক হোসাইন :
অবশেষ ডট বাংলা ডোমেইন (বাংলায় ওয়েব ঠিকানা লিখে ইন্টারনেটে প্রবেশের প্রক্রিয়া) পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চার বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকার পর আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হবে এই ডোমেইন। অনুমোদন পাওয়ার চার বছর পরও তত্ত্বাবধানকারী ঠিক করা এবং কাজে লাগাতে না পারায় এই ডোমেইনে অধিকার হারায় বাংলাদেশ। চারদিকে সমালোচনা শুরু হলে তৎপর হয় সরকার, ফলে আবারও ফিরে পায় ডট বাংলা ডমেইনটি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে আগামী ১৬ ডিসেম্বরই এটি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবে একই দিনে মন্ত্রণালয়ের অধীনে বায়েমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙুলের চাপ) সিম নিবন্ধন এবং ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ট্যাপ প্রদানের অনুষ্ঠান থাকায় তা পিছিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি করার কথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় ডট বাংলা ডোমেইন উন্মুক্ত করার সঠিক দিন বলে মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডট বাংলা ডোমেইন চালু হলে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী বাংলায় ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। ফলে ইংরেজি, চায়নিজ, ফ্রেঞ্চ, কোরীয়, আরবি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ভাষার পাশাপাশি বাংলায়ও ইন্টারনেটের কার্যক্রম চালাতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী যাবতীয় কাজ করে থাকে ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইসিএএনএন বা আইকান)। আইকান ইন্টারনেটে ডোমেইন নাম তালিকাভুক্তির প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে এ সম্পর্কিত একটি আবেদন করেন। আইকান বাংলা ভাষার জন্য স্ট্রিং ইভ্যালুয়েশন (বাংলা অক্ষরগুলো চেনার জন্য নির্দিষ্ট কোড আইডিএন সিসিটিএলডি) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইন্টারনেট অ্যাসাইন্ড নাম্বারস অথরিটি (আইএএনএ) বাংলার জন্য কোডটি (আইডিএন সিসিটিএলডি) অনুমোদনও (ডিএনস রুট জোনে ডেলিগেট) করে। কিন্তু কে হবে এর তত্ত্বাবধানকারী তা চার বছর ধরে নির্ধারণ করতে না পারায় ঝুলে যায় বিষয়টি। গত জুনে তা বাতিল হয়ে যাওয়ার খবরও আসে। তবে সরকারের তৎপরতায় তা আবারও ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই মাসেই অনুষ্ঠিত ডোমেস্টিক নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডিএনসিসি) সভায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) ডট বাংলার দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই ডোমেইনটির বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে ডোমেইন নেম সিস্টেম পরিচালনাকারী সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারসকে (আইসিএএনএন) চিঠি দেয় বিটিসিএল। বিটিসিএলের চিঠির জবাবে ডোমেইনটি বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রয়েছে বলে জানায় আইসিএএনএন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডোমেইনটি চালুর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে বিটিসিএল। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে আগামী ডিসেম্বরে এটি চালু করার কথা বলা হয়েছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত ভাষার মাস ২১ ফেব্রুয়ারিতে হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম কান্ট্রি কোড টপ- লেভেল ডোমেইন (সিসি-টিএলডি) হলো ডট বিডি। এরই মধ্যে এটি চালু করা হয়েছে। বিটিসিএল এ ডোমেইনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের দ্বিতীয় সিসি-টিএলডি হলো ডট বাংলা। ইন্টারনেটে একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে এই ডোমেইন। যেমন ডট ইউএস ডোমেইন নামের কোনো ওয়েবসাইেট ঢুকলে বোঝা যায় সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট। ডট বাংলা তেমনি ইউনিকোড দিয়ে স্বীকৃত বাংলাদেশি ডোমেইন। ডট বাংলা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি দ্বিতীয় ইন্টারনেট কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডোমেইন (সিসিটিএলডি)। এই ডোমেইন বাংলা ভাষায় ওয়েব ঠিকানার জন্য বোঝানো হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এই ডোমেইনের মালিক। এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশের পাশাপাশি এ ডোমেইনটির অধিকার পেতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পক্ষে ভারত সরকারও আবেদন করে। সব দিক বিবেচনা করে আইসিএএনএন তখন ডোমেইনটি বাংলাদেশকে বরাদ্দ দেয়। তবে বরাদ্দ পাওয়ার পরও ডোমেইনটি কাজে লাগাতে না পারায় সমালোচনা শুরু হয় এবং তা বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকেও তৎপর হওয়ার পর আবারও সেই ডোমেইন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ।
Source