-রাশেদ মেহেদী
বাংলাদেশি সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৪ এমআইইউ কিলোমিটার বা প্রায় ৫৪ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করবে ইউরোপে। এতদিন এ ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এরই মধ্যে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি টেলিকম ইতালিয়া স্পার্কলের কাছে এই বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বিক্রির ব্যাপারে বোর্ড সভায় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসসিসিএল। সর্বশেষ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সিদ্ধান্তটি পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন। সরকারি সম্মতি পেলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএসসিসিএল। তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই দেশের বাজারেও ব্যান্ডউইথের মূল্য আরও কমাবে বিএসসিসিএল।
--
এদিকে আইআরইউ পদ্ধতি বা একচেটিয়া ব্যবহারের অধিকার দিয়ে
বিদেশি কোম্পানির কাছে ব্যান্ডউইথ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েও বিশেষজ্ঞ মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, দেশীয় বাজারের সর্বনিম্ন মূল্য ৬২৫ টাকা প্রতি এমবিপিএসের তুলনায় প্রায় ৬৫ গুণ কম দামে ইউরোপে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হচ্ছে। বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে যাচাই করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমআইইউ কিলোমিটার এবং আইপি ট্রানজিটের পার্থক্য না বোঝার কারণেই অনেকে বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন।
রফতানি মূল্যের হিসাব-নিকাশ :টেলিকম ইতালিয়া স্পার্কলের কাছে ১৫ বছর মেয়াদে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৪ কোটি এমআইইউ কিলোমিটার বা প্রায় ৫৪ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মূল্য ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ হারে রক্ষণাবেক্ষণ মূল্যসহ বাংলাদেশ মোট পাবে ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রতি এমআইইউ কিলোমিটারের দাম ধরা হচ্ছে ৫২ সেন্ট বা প্রায় ৪০ টাকা। এ ব্যাপারে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশীয় বাজারে ব্যান্ডউইথ বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী এমআইইউ কিলোমিটারের সঙ্গে ট্রানজিট মূল্য, আন্তর্জাতিক ব্যাকহল ফি, পোর্ট ফি, ক্রস কানেক্ট ফি এবং ঢাকা ও কক্সবাজার পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ব্যাকহল মূল্য যোগ করা হয়। তখন এর প্রতি এমবিপিএস হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত নিয়মে মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট বা এমআইইউ কিলোমিটার হিসেবে ব্যান্ডউইথ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাড়তি মূল্য যোগ করা হয় না। এ কারণে দু'ধরনের বাজারে মূল্যও দু'রকম হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেশীয় বাজারে বিক্রি এবং ভারতে আইপি ট্রানজিট পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইথ রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্পার্কল ইতালিয়ার কাছে এমআইইউ কিলোমিটার হিসেবে একেবারে একটি খালি ট্রাক দেওয়া হচ্ছে। ফলে এখানে পণ্যের মূল্য পুরোপুরি বাদ যাচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান সমকালকে বলেন, বিএসসিসিএল যে দরে এমআইইউ কিলোমিটার হিসেবে ব্যান্ডউইথ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অনুযায়ী কিছুটা বেশিই। এর চেয়ে ভালো দর পাওয়া সম্ভব নয় বলেই বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন সাবির মনে করেন, এই দরটি স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম। তিনি বলেন, যদি এই দরে বিদেশে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হয়, তাহলে দেশীয় কোম্পানির কাছেও এমআইইউ কিলোমিটার হিসেবে আইআরইউ পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা উচিত।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশীয় কোম্পানির কাছে আইআরইউ পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা যায় না। কারণ ইনডিফিজিবল রাইট বা আইআরইউ পদ্ধতিতে ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা রফতানির অর্থ চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিটি এই ব্যান্ডউইথ অন্যের কাছে ভাড়া দিতে পারবে, তার ইচ্ছে মতো ব্যবহার করবে। এর ফলে লিজ গ্রহীতাই বিকল্প একটি সাবমেরিন কেবলের ভূমিকায় চলে যাবে। এ ছাড়া দেশের বাজারে একাধিক কোম্পানি বিপুল পরিমাণে ব্যান্ডউইথ থাকলে বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে তা পূরণও করা যাবে না। ফলে দেশের বাজারে বিশৃঙ্খলা হবে। এ কারণে বিদেশের বাজারে রফতানির সিদ্ধান্তই সবচেয়ে উপযুক্ত।
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানান, বছরের পর বছর ধরে দেশের বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ১৫ বছর মেয়াদে এককালীন মূল্য পরিশোধের শর্তে এই রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা হলে বর্তমানে যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে তা কমে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত এমআইইউ কিলোমিটারের মূল্য কমছে। তিনি জানান, রফতানির কারণে বাংলাদেশের চাহিদায় কোনো ঘাটতি হবে না। ২০১৬ সালে সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়ে আরও প্রায় ১৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাবে বাংলাদেশ।
Source