-আশরাফুল আজিম মিটু
বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রভৃতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্মোচন করেছে এক বিশাল জগতের দরজা। ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটাল। সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা অতিদ্রুত ডিজিটালইজড হচ্ছি। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমরা এগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু সাইবার ক্রাইম নামক এক মহাব্যাধি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বনাশ করছে। সরকার, রাষ্ট্র, ধর্ম—এমনকী বিশেষ বরেণ্য ব্যক্তিকে সাইবার ক্রাইম নামক এ মহাব্যাধি আক্রমণ করছে। এর ফলে বিনষ্ট হচ্ছে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি। সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে একজনের ছবি বিকৃত করে আপত্তিকর অবস্থায় প্রকাশ, অশ্লীল ছবি ধারণ করে তা মোবাইল ফোনে, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তির চরিত্রহনন করে এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা ও ছড়িয়ে দেওয়া সাইবার অপরাধ। এ অপরাধের মাধ্যমে অপরাধীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে একজনের ক্রেডিট কার্ডের গোপন নম্বর বের করে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ রায় ফাঁস করে দিচ্ছে। এতে করে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের ছবি তুলে তা বিকৃত ও নগ্ন করে মোবাইল ফোনে ও কম্পিউটারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার সাইবার ক্রাইম রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। আইনে বলা হয়েছে, অফ লাইন অথবা অন লাইনে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো সিস্টেমে প্রবেশ করে এবং তথ্য ও উপাত্ত চুরি করে তাহলে সর্বনিম্ন ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। এছাড়া হ্যাকিং করে যদি কেউ আরেকজনের তথ্য উপাত্ত নষ্ট করে বা ক্ষতিসাধন করে তাহলে ৭ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। মিথ্যা অশ্লীল ছবি প্রকাশ করলে ৭ বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। সংরক্ষিত সিস্টেমে প্রবেশসংক্রান্ত অপরাধে ৭ বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৪ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি অপরাধ জামিন অযোগ্য। ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ১০ দিনের মধ্যে বিচারক রায় ঘোষণা করবেন বলে আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে সাইবার অপরাধ দমন করতে দায়িত্বশীল হতে হবে। আইনের প্রয়োগের সঙ্গে, সাইবার অপরাধ দমনে আমাদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Source