News Title : গ্রামীণফোনের কল ড্রপে অতিষ্ঠ মানুষ -পররাষ্ট্র ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীও বিরক্ত

News Date : 2015-10-16

-ইত্তেফাক রিপোর্ট
গ্রামীণফোনের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু কার কাছে অভিযোগ, কিভাবে প্রতিকার মিলবে—এমন সব প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলে না। আর এ কারণেই হয়ত খোদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা বলেছেন। তার অভিযোগ, বারবার বলার পরও গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তার আবেদনে কর্ণপাত করেনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যদি প্রতিকার না পান, তাহলে সাধারণ মানুষ কি করে প্রতিকার পাবেন? আর এ কারণেই হয়ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাসের নিচে নিজের কমেন্টে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম লিখেছেন, আমি গ্রামীণফোনকে বারবার বলেছি সেবার মান বাড়াতে। এমনকি টেলিনরকেও বলেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আসলে সেবা দেয়ার চেয়ে মুনাফা নিয়েই ব্যস্ত তারা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগের ব্যাপারে ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিতভাবে জবাব দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে এবং আমরা তার সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের কাছে সকল গ্রাহকই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো গ্রাহকের অভিযোগকে আমরা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে থাকি। নেটওয়ার্ক বিস্তৃতকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। জিপি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী সকল গ্রাহকের যাতে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা হয় বা ভালো সেবা পান সেজন্য গ্রামীণফোন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, কম বিনিয়োগে বেশি লাভ করতে গিয়ে এই সেক্টরে এখন তেমন কোনো বিনিয়োগই করছে না মোবাইল ফোন অপারেটররা। ফলে দিন দিন দুর্বল হচ্ছে নেটওয়ার্ক। ক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার কারণে ও বিদ্যমান নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে তেমন বিনিয়োগই করছে না মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। গ্রামীণফোন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কল ড্রপে কল ফেরত সার্ভিস চালু করে। কিছুদিন পর নিরবে সেটি বন্ধও হয়ে যায়। বর্তমানে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই খারাপ। ওই বিশ্লেষকের মতে, কল ড্রপ ছাড়া টানা ৫ মিনিট কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে হাঙ্গেরীতে অবস্থান করছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ঢাকা ছাড়ার আগে ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কল ড্রপে বিরক্ত মানুষ। এটা মেনে নেয়া যায় না। মোবাইল ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি কল ড্রপে- কল ফেরত সার্ভিস চালু করতে হবে। এবং প্রত্যেক গ্রাহককে মাস শেষে একটা হিসেব দিতে হবে যে তার কতটা কল ড্রপ হয়েছে আর এর জন্য তিনি কত মিনিট কল ফেরত পেলেন।’ গত বুধবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সেখানে তিনি বলেন, ‘জিপির সমস্যা কী? কল করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই মাস আগে কল ড্রপ হওয়ার পর তারা এসএমএসের মাধ্যমে দোষ স্বীকার করেছিল। এছাড়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানিতে নেটওয়ার্ক অনেক খারাপ। আমার বাসার ফাস্ট ফ্লোরের বেডরুম (শোবার ঘর) থেকে অনেক কষ্ট করে নেটওয়ার্ক পেতে হচ্ছে। আমার বাসভবনের এখানে কোনো ধরনের ভবন নেই যে তাতে সিগন্যাল দুর্বল হবে। বিষয়টি দেখার জন্য আমি দুই বছর আগে তাদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি।’ এই স্ট্যাটাসের নিচে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩১৩টি কমেন্ট পড়েছে। আর লাইক পড়েছে প্রায় ৪ হাজার। এই স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন ১০৬ জন। কমেন্টে অধিকাংশ মানুষই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বলেছেন ব্যবস্থা নিতে। ওই স্ট্যাটাসের নিচে খোদ টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার কমেন্টে লিখেছেন, আমি বারবার তাদের (গ্রামীণফোন) কল ড্রপ সমস্যাসহ অন্যান্য সেবার মান বাড়াতে বলেছি। মনে হচ্ছে সেবার চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকে তাদের ঝোঁক বেশি। তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার, এখনই সময় এসেছে সেটা প্রমাণের। ওই স্ট্যাটাসের নিচে জাপানি দূতাবাসের কর্মকর্তা তন্ময় কুমার তার কমেন্টে লিখেছেন, ‘মান্যবর আমার ক্ষেত্রেও ঘটছে। গ্রামীণফোন ব্যবহার করে কি এটা আমাদের শিক্ষা?’ ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাওন লিখেছেন, ‘একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে সারদাহ এলাকার মানুষের শোবার ঘরে। গত তিন বছর ধরে গ্রামীণফোনের এ দুর্বল নেটওয়ার্ক ও কল ড্রপের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার বলেও কোনো ফল পাননি গ্রাহকরা। প্লিজ, ব্যবস্থা নিন স্যার।’ শাকিল তালুকদার তার কমেন্টে লিখেছেন, তিনি সিলেট শহরে বসবাস করছেন। সেখানে বিপুলসংখ্যক জিপি টাওয়ার থাকলেও কোনো নেটওয়ার্ক নেই। নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে কল করতে। মইনুল ইসলাম লিখেছেন, জিপি হল গলাকাটা ডাকাত। যেতেও কাটে আসতেও কাটে। নেট খরচটা যদি কমানো যেত তাহলে ভালো হতো।’

Source