-স্টাফ রিপোর্টার
আমদানি অনুমতি না নিয়ে আনা পণ্য বিক্রিতে লাগাম টানতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এ ধরনের প্রায় ১২টি দ্রব্যসামগ্রী কেনাবেচা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, যে কোনো প্রকার বেতার যন্ত্রপাতি, মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট, সিমযুক্ত ট্যাবলেট পিসি, ওয়াকি-টকি, বেইস, রিপিটার, ফিক্সড ওয়্যারলেস ফোন, মডেম, ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ রিসিভার ও অ্যান্টেনা স্যাটেলাইট টিভি রিসিভার ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়ার পর অনলাইনে এসব কেনাবেচায় লাগাম টানতে যাচ্ছে বিটিআরসি। গ্রাহকদের প্রতারণা থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব দ্রব্যসামগ্রী আমদানির জন্য বিটিআরসির অনুমতি নিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুমতি না নিয়ে এসব পণ্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন দোকানেও এসব পণ্য বিক্রি করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিটিআরসি ওইসব দোকানেও অভিযান চালাবে বলে জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির সচিব ও মুখপাত্র মো. সরওয়ার আলম মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি অনলাইনে এ ধরনের পণ্যসামগ্রী বেশি কেনাবেচা হচ্ছে। আবার বিভিন্ন দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। আমদানি অনুমতির না থাকা পণ্য বাজারে যেন বিক্রি না হয় সেজন্য বিটিআরসি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনলাইন কিংবা দোকান যেখানেই হোক না কেন আমদানি অনুমতি না থাকলে তা বিক্রি করা যাবে না। বিটিআরসি’র ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা জানান, এসব দ্রব্যসামগ্রীর বিক্রি বন্ধে শিগগিরই অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে এসব পণ্য বিক্রির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে বিটিআরসি। সংস্থাটির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোল্লা মো. জুবায়ের স্বাক্ষরিত এক সতর্কবাণীতে জানানো হয়েছে, আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-২০১৫ ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ অনুযায়ী উল্লিখিত পণ্য এবং অন্যান্য বেতারযন্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে বিটিআরসি’র পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হয়। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এক শ্রেণীর বিক্রেতা/ব্যবসায়ী/সংস্থা/ব্যক্তি বিটিআরসি’র পূর্বানুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বেতারযন্ত্র আমদানি, বিতরণ, পরিবেশন, ইজারা ও বিক্রয় করছে। বিটিআরসি’র ওই সতর্কবাণীতে বলা হয়, এ বিষয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে বিটিআরসি’র পূর্বানুমতি ছাড়া বেতারযন্ত্র সংক্রান্ত যে কোন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হলো। অন্যথায়, বেতারযন্ত্রের অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে কেনাবেচার সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। নকল, ভেজাল ও চোরাই দ্রব্যসামগ্রী কম দামে নগদ টাকায় বিক্রি করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারিত হয়ে পরে অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন পুলিশের কাছে। মামলার মতো ঘটনাও ঘটছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনগুলোর ক্লোন কপি। আবার অনলাইন থেকে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বৈধ পণ্য কেনা হলেও সেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকরা পড়ছেন বিপাকে। এছাড়া অনেক সময় যেসব পণ্যের অর্ডার অনলাইনে দেয়া হয় তা না দিয়ে অন্য পণ্য গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গাড়ি চুরির সক্রিয় সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে গাড়ি চুরি করে তারা দৈনিক পত্রিকায় ও অনলাইন ভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অনলাইন কেনাবেচার প্রতারণা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানা থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। দিনের পর দিন এ ধরনের অভিযোগের মাত্রা বাড়ছে। সম্প্রতি বিটিআরসি এসব পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, চোরাইভাবে এসব পণ্য কিনে গ্রাহকরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
Source