-সমীর কুমার দে
মোবাইল গ্রাহকদের অভিযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত নম্বরে (শর্ট কোড বা হটলাইন) যাতে গ্রাহকরা ফ্রি ফোন করে অভিযোগ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে টেলিটককে দিয়েই এটা শুরু হচ্ছে। এটা সফল হলে অন্য অপারেটরদেরও ফ্রি অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করতে বলা হবে। আর এই অভিযোগ শুধু সংশ্লিষ্ট অপারেটর নয়, বিটিআরসি এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে আমরাও জানতে পারবো। দ্রুত অভিযোগের সমাধানও করা হবে।
সম্প্রতি সচিবালয়ে নিজ অফিসে ইত্তেফাকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। গত ১৪ জুলাই শপথ নেয়ার পর ১৬ জুলাই টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারানা হালিম। অগোছালো টেলিকম সেক্টরকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ইত্তেফাককে দেয়া তার সাক্ষাত্কারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—
ইত্তেফাক ঃ আপনি ৯০ দিনের একটা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, সেটা কতদূর এগুলো?
তারানা হালিম ঃ ৯০ দিন শেষ হওয়ার পর এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা কতটুকু করতে পারলেন। যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তাদের সরে যেতে হবে।
ইত্তেফাক ঃ নতুন করে যে সিম রেজিস্ট্রেশন হবে, তাতে তো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে?
তারানা হালিম ঃ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে মানুষকে তো একটু কষ্ট সহ্য করতেই হবে? তবে কথা দিতে পারি, এবারই শেষ। আর ভোগান্তি হবে না। কারণ এবার তাদের দেয়া তথ্য ডাটাবেজের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।
ইত্তেফাক ঃ জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার মোবাইল অপারেটরদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে নাগরিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে কি-না?
তারানা হালিম ঃ জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে তো আর এমন কোন তথ্য থাকে না যেটা জেনে গেলে বিরাট কোন ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া যারা এটা ব্যবহার করবেন তাদের অবশ্যই গোপনীয়তা রক্ষা করেই কাজ করতে হবে। অপারেটরদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তিতে এসব বিষয় থাকবে।
ইত্তেফাক ঃ মন্ত্রীর বাইরে আপনি মোবাইল ফোনের একজন গ্রাহকও? মোবাইল অপারেটরদের বর্তমান সেবায় আপনি কি সন্তুষ্ট?
তারানা হালিম ঃ বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের বার বার সতর্ক করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে সেবার মান বাড়াতে। বিশেষ করে কারো মোবাইল ফোন থেকে কোন টাকা কাটার আগে ওই গ্রাহককে বিষয়টি জানাতে হবে। ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ হলে গ্রাহকের অনুমতি না নিয়ে নতুন প্যাকেজ চালু করা যাবে না। টুজি-থ্রিজি আলাদা করতে হবে।
ইত্তেফাক ঃ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল হবে? বিষয়টি কতদূর এগুলো?
তারানা হালিম ঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ তো এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা। আমাদের কিন্তু এখন প্রায় সবকিছুই ইন্টারনেটের মাধ্যমে হচ্ছে। আমি তো মনে করি ২০২১ সালের অনেক আগেই বাংলাদেশ পুরোপুরি ডিজিটাল হবে।
ইত্তেফাক ঃ স্বপ্নের থ্রিজি এলো, এখনও পৌঁছেনি সবখানে। ফোরজি কতদূর?
তারানা হালিম: ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ ক্যাবল নিতে না পারলে গ্রাম পর্যায়ে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব নয়। বিটিসিএলকে আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিছু প্রকল্পে কাজ চলছে, সেটা শেষ হলেই হয়ত থ্রিজি সার্ভিসটা গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে। আর ফোরজি আসতে একটু সময় লাগবে।
ইত্তেফাক ঃ আপনার ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা কি?
তারানা হালিম ঃ টেলিকম সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে হলে টেলিটককে শক্তিশালী করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তাদের গ্রাহক বাড়াতে হবে। এ দিকে মনোযোগ দিতে চাই। পাশাপাশি ডাক বিভাগকে সচল করতে হবে। তাদের ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টেলিটক ও ডাক বিভাগকে একে অন্যের সহযোগিতায় কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা চলছে। যেমন-ডাক বিভাগের প্রতিটি অফিসের একটি রুম বিনা ভাড়ায় টেলিটককে কাস্টমার সার্ভিসের জন্য দেবে। এর বিনিময়ে টেলিটক ডাক বিভাগের প্রতিটি অফিসের একটি রুম ডিজিটাল করে দেবে। পাশাপাশি শিগগিরই ডাক বিভাগে যুক্ত হচ্ছে ১১৮টি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি। প্রধানমন্ত্রী এগুলোতে অনুমোদন দিয়েছেন।
ইত্তেফাক ঃ সরকার একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছে, অন্যদিকে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করছে? কম্পিউটার সামগ্রীর ওপরও ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে? এটা স্ববিরোধী কি-না?
তারানা হালিম ঃ একটা কথা মনে রাখতে হবে, সম্পূরক শুল্ক বা ভ্যাট আরোপ করলেই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন বাধাগ্রস্ত হবে এমনটি নয়। আর সরকারকেও দেশ চালাতে হবে। তাই প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব সঠিকভাবে ভ্যাট দেয়া।
Source