-রোজিনা ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম
বিদেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক কল রেট দেড় সেন্ট থেকে বেড়ে দুই সেন্ট হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। কল রেট বেড়ে যাওয়ার ফলে যে বাড়তি আয় হচ্ছে, তার ভাগ না পাওয়ায় প্রতিদিন ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দায়ী করে বলছে, আয়ের ভাগাভাগির এ বিষয়টি আগে থেকে মন্ত্রণালয়কে না জানানোয় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক টাকার ক্ষতিও আমরা মেনে নেব না। বিষয়টির সঙ্গে সরকারের আয়-ব্যয়ের সম্পর্ক থাকায় আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিমতসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
বিষয়টির জন্য বিটিআরসিকে দায়ী করে তারানা হালিম বলেন, ‘কল রেট বাড়ানোর কোনো তথ্য প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি বিটিআরসি। কল রেট বেড়ে যাওয়ায় সরকারের কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাকে সেটা জানানোর দায়িত্ব ছিল বিটিআরসির, কিন্তু সেটা তারা করেনি। আমার মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়ার পর তারা তথ্য দিয়েছে।’
এদিকে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে বিটিআরসি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কল পরিচালনা কার্যক্রম গত ২৪ জুন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ মিনিট কল আসত। কিন্তু আইজিডব্লিউ অপারেটররা কল রেট বাড়িয়ে দুই সেন্ট করার পর দেশে আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা কমে ৯ কোটি ৩০ লাখ মিনিট হয়েছে। এর ফলে সরকারের দৈনিক রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৫৫ লাখ টাকা।
রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করলেও আয়ের ভাগাভাগির জন্য সরকার তথা মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে বিটিআরসি বলছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক কল রেট সম্পর্কিত যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাতে সর্বনিম্ন হারে রাজস্ব ভাগাভাগির সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এখন সরকার যদি ভিন্ন নির্দেশনা দেয়, তাহলে কমিশন সেভাবেই কাজ করবে।
আন্তর্জাতিক কল আনার বর্তমান পরীক্ষামূলক নিয়মটির মেয়াদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেলেও এরপর নতুন কোনো নির্দেশনা না থাকায় আগের দেড় সেন্টেই রাজস্ব ভাগাভাগি হচ্ছে। আর এর পুরো সুযোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা। কল রেট দুই সেন্ট নির্ধারিত হওয়ার ফলে বাড়তি আয়ের পুরোটাই তাঁদের পকেটে চলে যাচ্ছে।
তবে স্বস্তিতে নেই আইজিডব্লিউ অপারেটররাও। সেপ্টেম্বরে দেশে প্রতিদিন গড়ে নয় কোটি মিনিট করে কল এলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত তা আট কোটি মিনিটে নেমে এসেছে বলে আইজিডব্লিউ অপারেটর সূত্রে জানা গেছে। এ কারণে তাদের একচেটিয়া আয়ও কমে যাচ্ছে। আর প্রতিদিনই বাড়ছে সরকার ও অন্য পক্ষগুলোর ক্ষতি।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয় তার ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে।
দেশে বর্তমানে ২৩টি আইজিডব্লিউ অপারেটর থাকলেও চালু হওয়া নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সাত প্রতিষ্ঠান নিজেরাই একটি কমন ইন্টারন্যাশনাল পয়েন্ট (সিআইপি) তৈরি করেছে। আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ) নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছে এ সাত অপারেটর। একই লাইসেন্স নিয়ে দুই স্তরবিশিষ্ট এ নিয়ম চালু করা নিয়ে অনেক বিরোধিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই নিয়মটিই চালু হয়।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে কল রেট যখন তিন সেন্ট ছিল, তখন কল রেট বাড়ানোর সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ছিল ৩ দশমিক ৪৫ সেন্ট। কিন্তু কল রেট যখন কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়, তখন আর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে কার্যত দেড় সেন্ট থেকে ৩ দশমিক ৪৫ সেন্ট পর্যন্ত যেকোনো কল রেটে কল আনতে পারে আইজিডব্লিউ অপারেটররা। কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা ১ দশমিক ৮ সেন্ট থেকে ২ সেন্ট নির্ধারণের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বিটিআরসি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা।
Source