-স্টাফ রিপোর্টার
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মোবাইলের কলড্রপ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, কলড্রপ নিয়ে আগেও আলোচনা করেছি। সে ইস্যু এখনও রয়েছে। গ্রাহকসেবাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিতে হবে। তাদের সন্তুষ্টির উপরই মন্ত্রণালয়ের সাফল্য নির্ভর করছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিনিধি ও বিটিআরসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদের মন্তব্য ও অভিযোগগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। এর আগে কলড্রপ হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, কলড্রপ সমস্যার সমাধানসহ উন্নত সেবা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখন থেকে গ্রাহককে না জানিয়ে কোন ধরনের সেবার প্যাকেজ চালু করা যাবে না। তৃতীয়ত, গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া ইন্টারনেট বা অন্য কোন প্যাকেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন করা যাবে না, চতুর্থত, আগামী দুই মাসের মধ্যেই মোবাইল ফোন অপারেটর, আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। আর দ্রুত ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বা ভাস গাইড লাইন চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকে অপারেটররা জানান, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে কলড্রপ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আর এই কলড্রপের জন্য শুধু অপারেটররাই দায়ী নয়, এরসঙ্গে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন অপারেটররাও জড়িত। তবে মন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহককে তার ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। কিভাবে দেয়া হবে তা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন অপারেটরদের সিইও’র কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে বৈঠকের শুরুতেই মোবাইল ফোন অপারেটরদের সামনে কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস ও তাদের গ্রাহকদের মন্তব্য প্রদর্শন করা হয়। ওই স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রী নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে এয়ারটেলের সিইও পিডি শর্মা বৈঠকে বলেন, এয়ারটেল এক সেকেন্ড পালস চালু রেখেছে। এর ফলে কলড্রপে গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির কারণ নেই। তিনি অন্য অপারেটরদের এ ধরনের সেবা চালুর পরামর্শ দেন। গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, কলড্রপের জন্য শুধু অপারেটররা দায়ী নন। আন্তঃসংযোগ সেবা দেয়ার সঙ্গে জড়িত আইসিএক্স, ট্রান্সমিশন সেবা দেয়া এনটিটিএন এবং আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায় আছে। কিন্তু তাদের দায় গ্রাহকের আড়ালে থেকে যায়। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আইসিএক্স-এর সক্ষমতা কম থাকলে কলড্রপ হয়, ট্রান্সমিশন লাইনে ত্রুটি হলে কলড্রপ হয়, দুর্বল ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক কল নিয়ে আসা হলেও কলড্রপ হতে পারে। তিনি জানান, গ্রামীণফোনের কলড্রপের হার বর্তমানে এক শতাংশ বা তার নিচে। যদিও বিটিআরসি’র নির্দেশনায় তিন শতাংশ পর্যন্ত কলড্রপ গ্রহণযোগ্য। পরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কলড্রপের পরে কল ফেরতের বিষয়টি এখন নেই। গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হয়ে অভিযোগ করছেন। আমরা কারও মধ্যে বৈষম্য করতে চাই না। সবাইকে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। কমবেশি ভোগান্তিতে সব অপারেটরের গ্রাহকই রয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী এসময় বিভিন্ন সমস্যার কারণ গ্রাহকদের পক্ষে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে জানতে চান। এসময় বাংলালিংকের প্রতিনিধি বলেন, বিশ্বের সব দেশে কলের ক্ষেত্রে সমস্যার অভিযোগ প্রযোজ্য নয়। আমাদের লোকাল কলের ব্যবস্থাপনা ভালো রয়েছে। বিভিন্ন দেশে কলের ক্ষেত্রে সেদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার চিত্র দেখাও জরুরি। আমরা আমাদের নম্বর ওয়েবসাইটে দিচ্ছি। গ্রাহকের সুবিধা-অসুবিধা আমরা দেখছি। এসময় ভারতে কলড্রপের পর সেটি ফেরত দেয়া হয় বলে উল্লেখ করেন তারানা হালিম। পরে বিটিআরসি প্রতিনিধি বলেন, আমরা জরিপ চালিয়ে দেখেছি কলড্রপের হার কেমন। অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, অভিযোগ ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা রাখেন তারা। সে হিসেবে সমাধানও করেন। কলড্রপের জন্য কেবল অপারেটর দায়ী নয় বলে বিষয়টি বিবেচনার কথা বলেন বিটিআরসি প্রতিনিধি। বৈঠকে কলড্রপ, থ্রিজি সার্ভিসে সমস্যা, ইন্টারনেটের দাম বেশি, বিদেশী কলে অযথা টাকা কেটে নেয়া, রিংটোন বা কলার টিউনে ব্যবহৃত গানের সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের সম্মানি না দেয়া, আনলিমিটেড প্যাকেজ বলে ফেয়ার ইউজ পলিসিসহ বিভিন্ন সমস্যা এখনও প্রকট রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তারানা হালিম বলেন, মোবাইলফোন সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে একজন গ্রাহকও নিজেকে প্রতারিত না ভাবেন। তিনি বলেন, কলড্রপ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সভা ও তাদের উদ্যোগগুলো জান?বো ডিসেম্বরের মধ্যে। তারা গ্রাহককে কলমিনিট ফেরত দেবেন, না কী করবেন, সেসব জানাবেন। প্যাকেজের অফারে গ্রাহক সাড়া না দিলে অটোরিনিউ হবে না কোন প্যাকেজ। তিনি বলেন, টিউনে শিল্পী সম্মানির ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। মূল্য সংযোজন করের বিষয়েও তখন আলোচনা হবে। এসময় সাবস্ক্রাইবার ও রিটেইলার, ডিস্ট্রিবিউটরদের বিষয়েও তথ্য চান তিনি। এছাড়া ডাটা প্রদানে অপারেটরদের তাগিদ দেন। যাতে ১৬ই ডিসেম্বর বায়োমেট্রিক্স চালু করা যায়।
Source