খবরের শিরোনামঃ একটি পরিচয়পত্রের বিপরীতে ২০ সিম রাখার প্রস্তাব

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১০-২৩

-নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় বর্তমানে একজন গ্রাহক তার ইচ্ছামতো যত খুশি মোবাইলের সিমকার্ড ব্যবহার করতে পারেন। ফলে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই কয়েক হাজার সিম নিবন্ধনের মতো ঘটনাও দেশে ঘটেছে। তবে ইচ্ছামতো অসংখ্য মোবাইল সিম রাখার দিন শেষ হচ্ছে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগির এ বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। যাতে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০টি মোবাইল সিম রাখার সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, মোবাইলের সিম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে আসছে। আর এই বিশৃঙ্খলা নানা ধরনের অপরাধের সুযোগ করে দিচ্ছে। শৃঙ্খলা আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে একজন গ্রাহক তার এনআইডি দেখিয়ে এক অপারেটরের পাঁচটির বেশি সিমের মালিক হতে পারবেন না। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, টেলিকম শিল্পের উন্নয়নে সরকারের যেকোনো ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে আরও ভালো হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাবে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে; ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে সোয়া পাঁচ কোটি গ্রাহক। ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন না করে সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া সম্প্রতি শুরু হওয়ার পর অপারেটররা গ্রাহকের সিম নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য এনআইডি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া শুরু করে। প্রায় এক কোটি গ্রাহকের নিবন্ধন যাচাই করে দেখা গেছে, এর মধ্যে সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি সিম। একটি ‘ভুয়া’ জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম তোলা হয়েছে। আরও তিনটি এনআইডি পাওয়া গেছে, যেগুলোর বিপরীতে ১১ হাজার ৮৬৬টি, ১১ হাজার ৩২৮টি ও ৬ হাজার ১৭৯টি সিমের নিবন্ধন হয়েছে বলেও যাচাইয়ে ধরা পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শুরু করার ঘোষণা আসে। এ ছাড়া সিম সংখ্যার সীমা বেঁধে দিতে বিটিআরসিকে একটি চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়, এক এনআইডির বিপরীতে এক অপারেটরের সর্বোচ্চ সাতটি এবং সব মিলিয়ে ২৪টির বেশি সিম না রাখার নিয়ম করা যেতে পারে। বিটিআরসিকে এর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। বিষয়টি পর্যালোচনা করে বিটিআরসি যে জবাব দিয়েছে, তাতেই এক গ্রাহকের সর্বোচ্চ ২০টি সিম এবং এক অপারেটরের সর্বোচ্চ পাঁচটি সিম রাখার সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এদিকে নিবন্ধনে শৃঙ্খলা আনতে ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চূড়ান্তভাবে সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। এ ছাড়া গ্রাহকরা আগামী বছরের শুরুতেই মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলানোর সুযোগ (এমএনপি) পেতে যাচ্ছেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

Source