-নিজস্ব প্রতিবেদক
মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট-ইমেইলের এই যুগে প্রয়োজন ফুরাচ্ছে সনাতনী চিঠির। দিনকে দিন শূন্যতার দিকে যাচ্ছে ডাক বিভাগের চিঠির বাক্স। ইন্টারনেটে মানুষের অভ্যস্ততা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বেসরকারি কুরিয়ারের কাছে ম্রিয়মাণ ডাক বিভাগের ডকুমেন্ট-পাশ্র্বেল বিতরণের কাজও। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আধুনিক কিছু সেবা চালু করলেও সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে তা কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি। বছরের পর বছর লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক দিন থেকে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি নানা উপায় খুঁজছে। অবশেষে ই-কমার্সের ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ডাক বিভাগ।
ডাক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছু অত্যাধুনিক সেবাও ইতিমধ্যে তাঁরা যোগ করেছেন তাঁদের তালিকায়। এবার এই তালিকায় ডাক বিভাগ যোগ করতে যাচ্ছে ই-কমার্স। প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরে কয়েকটি পোস্ট অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে এই সেবা। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সাড়ে আট হাজার পোস্ট অফিসেই ই-কমার্সের সেবা থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এস ভদ্র।
এস এস ভদ্র বলেন, 'আমাদের যে অবকাঠামো তাতে এই সেবায় আমাদের সঙ্গে কেউ কুলিয়ে উঠতে পারবে না। অল্প দিনের মধ্যেই আমরা মার্কেট লিডার হয়ে যাব।'
ডাক বিভাগের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'আমরা অল্প দিনের মধ্যে পোস্ট অফিসগুলোর আধুনিকায়নের কাজ শেষ করে ফেলব। আর একই সঙ্গে চলবে অত্যাধুনিক ই-কমার্স সেবার প্রসার।'
বর্তমানে দেশের ই-কমার্স খাত ১০ শতাংশের কিছু বেশি হারে বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে এই খাতের বাজার ২০০ কোটি টাকার মধ্যে বলেও ধারণা করা হয়। তবে ডাক বিভাগ দাবি করছে, পাঁচ বছরের মধ্যে এই খাতের প্রসার হাজার কোটি টাকা পেরিয়ে যাবে। যার বড় অংশ থাকবে তাদের হাতে।
ডাক বিভাগ তাদের ই-কমার্স সেবার পণ্য তালিকা তৈরি শুরু করেনি। তবে অন্য সব ই-কমার্স সাইটের মতো তাদের তালিকায়ও সব পণ্য থাকবে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক। সেবাটি চালু করার ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ জাপানের মডেল অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। জাপান তাদের ডাক বিভাগের মাধ্যমে ই-কমার্স চালু করে সফল হয়েছে। এর বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও একই মডেল রয়েছে। যেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।
বর্তমানে ডাক বিভাগের কাছে অত্যাধুনিক পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মতো সেবা আছে। ২০১১ সালে অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মতো পোস্টাল ক্যাশ কার্ড চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশের এক হাজার ৪৪৬টি পোস্ট অফিসে এই সেবা আছে। তবে সব মিলে সারা দেশে কার্ডধারীর সংখ্যা মাত্র ৭৩ হাজার।
২০১০ সালে ডাক বিভাগ ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সেবা চালু করেছে, যা দুই হাজার ৭৫০টি ডাক বিভাগে চালু রয়েছে। যাতে সব মিলে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৮০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সালে ডাক বিভাগের আয় ২৫৩ কোটি টাকা। আর এর বিপরীতে খরচ হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। তবে ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, ই-কমার্স চালু হলে তাদের আয় অনেকগুণ বেড়ে যাবে। ২০১৩-১৪ সালে বিভাগের আয় হয় ২১৯ কোটি টাকা। যার বিপরীতে খরচ হয়েছিল ৪৪৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
Source