খবরের শিরোনামঃ আলোর পথ দেখতে যাচ্ছে জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১১-১০

-মিজানুর রহমান সোহেল
দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নীতিমালা আলোর পথ দেখতে যাচ্ছে। চলতি মাসেই অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে উত্থাপন করা হবে মন্ত্রিসভায়। মূলত ৫টি মৌলিক বিষয়কে আমলে নিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা-২০১৫। এগুলো হচ্ছে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার, বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশাধিকার, কার্যকর সুশাসন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তির সর্বাধুনিক ব্যবহার ও একত্রীকরণ। এছাড়া নীতিমালায় স্থানীয়ভাবে টেলিযোগাযোগ পণ্য উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, গ্রাহক অধিকার সুরক্ষা, সাইবার স্পেস ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় দেশে প্রথমবারের মতো বেতার তরঙ্গবিষয়ক পৃথক ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নে পৃথক আরও একটি ইন্সটিটিউট স্থাপনেরও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ ভাগ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৯০ ভাগ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা। একইসঙ্গে ১০ বছরের জন্য এ নীতিমালা করা হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে নীতিমালা সংশোধন করা যাবে। নীতিমালাটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য ১৫ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। পরদিন মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। নতুন এ নীতিমালায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে- বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ টেলিঘনত্ব রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এটি ৯০ ভাগে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। টেলিঘনত্ব হচ্ছে প্রতি ১০০ মানুষের মধ্যে যত মানুষ টেলিযোগাযোগ সেবার আওতায় আছে। তবে মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রায় টেলিঘনত্ব ১০০ ভাগ অর্জন করার কথা বলা হয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে। বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২৭ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ৩৫ ভাগ, ২০২১ সালে ৫০ ভাগ এবং ২০২৫ সালে ইন্টারনেটের বিস্তার ৯০ ভাগে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল বা ফিল্ড ব্রডব্যান্ডের বিস্তার বর্তমানে ৭ ভাগ। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৮ সালে এটি ১২ ভাগ, ২০২১ সালে ৩০ ভাগ এবং ২০২৫ সালে ৬০ ভাগ অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে তথ্য মহাসড়কে সংযুক্ত করা ও সব ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির তারহীন ব্রডব্যান্ড সেবা বিস্তৃত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ২০২১ সালে ২০ ভাগ বাসস্থান এবং প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতির অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক এবং ২০২৫ সালে ৫০ ভাগ বাসস্থান ও প্রতিষ্ঠানে এ সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রসঙ্গে সদ্যবিদায়ী বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেছেন, সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ নীতিমালার নতুন খসড়া মানসম্পন্ন হয়নি। তিনি বলেন, আমি মনে করি মন্ত্রণালয় যে নতুন খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে তা সঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ খাতের পুরনো ধ্যানধারণাগুলোই খসড়া নীতিমালায় থেকে গেছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নের বিষয়টি খসড়া নীতিমালায় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। দেশে ১৯৯৮ সাল থেকে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণয়নের পর এ খাতে অনেক পরিবর্তন এলেও গত ১৭ বছর পুরনো নীতিমালাটি আর সংশোধন করা হয়নি। সে বছর সরকার প্রথম টেলিযোগাযোগ নীতিমালা করে। তখন অনেক পর্যালোচনার মাধ্যমে শ্রীলংকান এক পরামর্শক নীতিমালাটির কাজ সম্পন্ন করেন। পরে ২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইন করা হয়। ২০১০ সালে এ আইন পরিবর্তনের সময় টেলিযোগাযোগ নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্য অনেক বিষয় সেখানে যুক্ত করা হয়। সরকারের অনুরোধে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ২০১২ সালে টেলিযোগাযোগ নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু এরপর তিন বছর পার হলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালের আগে আরও একবার নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। চলতি বছর আবার নীতিমালাটি সংশোধনের কাজ শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। খসড়া নীতিমালায় ২০২১ সালের আগেই দেশের সব মানুষকে টেলিযোগাযোগ ও ৫০ ভাগ মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৩ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত খসড়া নীতিমালার ওপর জনমতও সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের নীতিমালাটি দেখা যাবে http://goo.gl/W6UVxC এই ঠিকানায় এবং ২০১৫ সালের খসড়া নীতিমালাটি দেখা যাবে http://goo.gl/odRxjq এই ঠিকানায়।

Source