-বণিক বার্তা ডেস্ক
সিস্টেমা শ্যাম টেলিসার্ভিসেসের ভারতের ব্যবসা কিনে নিচ্ছে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স। দেশটিতে এমটিএস ব্র্যান্ড নামে সেবা দিচ্ছে সিস্টেমা। এ অধিগ্রহণ দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট খাতের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণে প্রভাবিত করবে। গতকাল আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি ফিচ রেটিংসের পক্ষ থেকে এমনটাই আভাস দেয়া হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসা প্রসারে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণের সংস্কৃতি নতুন নয়। গত দেড় দশকে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অধিগ্রহণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সাম্প্রতিক সময় এ প্রবণতা আরো বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এখন দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা থ্রিজি ও ফোরজির প্রসার হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আসছে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ফাইভজি। এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবসা প্রসারে তাই আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বড় অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দ্রুত প্রসারমাণ থ্রিজি, ফোরজি এবং আসন্ন ফাইভজি সেবা খাতকে সমর্থন দিতে এবং রাজস্ব বাড়াতে প্রয়োজন বেশি বেশি স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ। আর এজন্য তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিগ্রহণে ঝুঁকছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে টিকতে না পেরে লোকসানে থাকা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের শুরু থেকেই ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। কেননা আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স জিও ফোরজি ডাটা সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে।
ফিচ রেটিংসের বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু গড়ে ২০ শতাংশ ডাটা ট্যারিফ দখলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতে নেতৃত্ব দেবে জিও। এছাড়া ভয়েস ওভার এলটিই সেবা সরবরাহের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যের ফোরজি হ্যান্ডসেট সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রাথমিকভাবে এর প্রভাব পড়বে টাটা টেলিসার্ভিসেস, ভিডিওকন টেলিকম ও এয়ারসেলের মতো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিক লোকসানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ না থাকা অথবা উন্নত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় বিনিয়োগের মতো প্রয়োজনীয় অর্থ ঘাটতির কারণে সংশ্লিষ্ট খাত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভয়েস মার্কেট শেয়ার হারাবে। একই সঙ্গে জিওর প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেশটির ডাটা সার্ভিস খাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হবে। ফলে গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী সেবা সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাও স্পেক্ট্রাম শেয়ারিং এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সমর্থন করবে।
ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের টেলিযোগাযোগ শিল্প খাত পাঁচ থেকে ছয়টি লাভজনক টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদে সমর্থন করবে। দেশটির শীর্ষ তিন টেলিকম প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন ইন্ডিয়া এবং আইডিয়া সেলুলার। এ তিন প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে দেশটির টেলিকম খাতের ৭৩ শতাংশ। আর এ পরিমাণ ক্রমে আরো বাড়বে।
১০টি অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাত অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। কিন্তু স্পেক্ট্রাম বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতার সঙ্গে স্পেক্ট্রাম ব্যবহার এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একত্রীকরণের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবে টেলিযোগাযোগ শিল্প খাত।
প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এমটিএস অধিগ্রহণ শেষে ব্যবসা প্রসারে রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে যৌথভাবে অবকাঠামো শেয়ারের মাধ্যমে কাজ করবে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স। এরই মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো শেয়ার-সংক্রান্ত একটি চুক্তি রয়েছে।
Source