খবরের শিরোনামঃ মোট গ্রাহকের মাত্র ৮ শতাংশের তথ্য দিয়েছে অপারেটররা

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১১-১১

-সুমন আফসার
সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেলফোন অপারেটরদের কাছে গত মাসে সব গ্রাহকের তথ্য চেয়ে পাঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ছয় সেলফোন অপারেটর ১৩ কোটির বেশি গ্রাহকের মধ্যে মাত্র এক কোটি গ্রাহকের তথ্য দিয়েছে, যা মোট সংযোগের ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে যে এক কোটি গ্রাহকের তথ্য দিয়েছে অপারেটররা, তার মধ্যে সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি সংযোগ। শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ২২ লাখ নিবন্ধনের তথ্য দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক সংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ। আর বাংলালিংক ২৩ লাখ ৫৫ হাজার, রবি ১৮ লাখ, এয়ারটেল ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৩৮, সিটিসেল ৪ লাখ ১৪ হাজার ও রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক ১৬ লাখ গ্রাহকের তথ্য জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সেলফোন সেবার গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের সংযোগ সংখ্যা ৫ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার, রবির ২ কোটি ৮৩ লাখ ৭৩ হাজার, এয়ারটেলের ৯৭ লাখ ১৭ হাজার, টেলিটকের ৪১ লাখ ৮ হাজার ও সিটিসেলের ১১ লাখ ১৩ হাজার। সেলফোন সংযোগ ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালের এপ্রিলে সেলফোন সংযোগ কেনার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করে বিটিআরসি। একই বছরের ১২ অক্টোবর থেকে প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম ও রিম বিক্রি বন্ধ করা হয়। তবে এর পরও ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে একাধিক সংযোগ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিম নিবন্ধনের তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডাটাবেজের তথ্য মিলিয়ে দেখে বৈধভাবে নিবন্ধিত সিমকার্ড যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি সিম নিবন্ধন কার্যক্রমকে আরো নির্ভরযোগ্য করে তুলতে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালুরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বিক্রি করা সিম হিসাব করলে ১৩ কোটি গ্রাহকের সংখ্যাটা ঠিক আছে। তবে অনেক সংযোগই যথাযথভাবে নিবন্ধন করা হয়নি। এটা অপারেটরদের চূড়ান্ত গাফিলতি। তারা সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষণ করেনি। তথ্য চাওয়ার পর তারা প্রতিদিনই একটু একটু করে তথ্য দিচ্ছে। ২০১২ সালের আগের তথ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে ২০১২ সালের পরের তথ্য তাদের কাছে থাকা উচিত ছিল। এটি থাকলে মাত্র তিনদিনের মধ্যেই তারা দিয়ে দিতে পারত। সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষিত না থাকায় প্রতিদিন এক-দুই লাখ করে সিমের তথ্য দিচ্ছে, যা কোটি কোটি গ্রাহকের তুলনায় নগণ্য। অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের আগে নিবন্ধিত সিমের ক্ষেত্রে অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সংযোগ কিনেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই নিবন্ধন করা হয়েছে এসব সংযোগ। তবে এমন সংযোগের তথ্যও সংরক্ষিত রয়েছে বলে অপারেটরদের দাবি। জানা গেছে, অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা যাচাইয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অপারেটরদের দেয়া তথ্যের ওপরই নির্ভর করতে হয় সংস্থাটিকে। মূলত সক্রিয় সংযোগ বিবেচনায় প্রকাশ করা হয় গ্রাহক সংখ্যার তথ্য। তবে এটি অপারেটরদের মোট গ্রাহকের সংখ্যা নয়। কারণ সেলফোন ব্যবহারকারীদের অনেকেরই একাধিক সংযোগ রয়েছে। সেলফোন সংযোগ প্রবৃদ্ধির যে তথ্য দেয়া হচ্ছে, তাতে এসব সংযোগের হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। সেলফোন সেবা খাতভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর হিসাবে বাংলাদেশে এ খাতে প্রকৃত গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদের মধ্যেও একাধিক সিম ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সেলফোন গ্রাহক সংখ্যা ৭৫৭ কোটি। একাধিক সিম ব্যবহারের বৈশ্বিক গড় ১ দশমিক ৮। অর্থাৎ একজন গ্রাহক গড়ে এ সংখ্যক সিম ব্যবহার করছেন। গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, গ্রামীণফোনসহ সব সেলফোন অপারেটরই প্রতি মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তাদের বিদ্যমান সংযোগের প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে দিয়ে থাকে। বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী যেসব সংযোগ বিগত তিন মাসে একবারের জন্যও ব্যবহার হয়েছে, সেগুলোকে সক্রিয় সংযোগ হিসেবে গণ্য করা হয়। আর এর ভিত্তিতেই মোট গ্রাহক সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন গ্রাহক কয়টি সিম কিনতে পারবেন, সে ব্যাপারো কোনো বিধিনিষেধ নেই। ফলে নতুন যে সংযোগ বিক্রি হচ্ছে, তা অধিকাংশ বিদ্যমান গ্রাহকরাই কিনছেন। মূলত সেবার মানে অসন্তোষ থেকে কিংবা একাধিক ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ পেতেই এসব সংযোগ কিনছেন তারা। আগামী দিনগুলোতেও নতুন গ্রাহকের পরিবর্তে এ ধরনের সংযোগ বিক্রির সংখ্যাই বাড়বে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ ভিওআইপি বা অপরাধমূলক নানা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্যও প্রচুর সিম বিক্রি হয়েছে। এ ধরনের সিম বিক্রির হিসাব থাকলেও যথাযথভাবে নিবন্ধন না হওয়ায় সেগুলোর প্রকৃত গ্রাহকের তথ্য নেই অপারেটরদের কাছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি পরিচয়পত্রের বিপরীতে হাজার হাজার সিমের নিবন্ধন হয়েছে। ভুয়া এনআইডি দিয়ে সিম তোলা ও এক এনআইডি দেখিয়ে বহু সিম কেনার বেশকিছু ঘটনা নিবন্ধন যাচাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এমনকি একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম তোলার নজিরও পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনটি এনআইডির বিপরীতে যথাক্রমে ১১ হাজার ৮৬৬, ১১ হাজার ৩২৮ ও ৬ হাজার ১৭৯টি সিমের নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন অপারেটরের সিম রয়েছে। অপারেটরদের গ্রাহক প্রবৃদ্ধির হার কয়েক বছর ধরে ক্রমেই নিম্নমুখী। ২০১৪ সালে ছয় সেলফোন অপারেটরের গ্রাহক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা ২০১৩ সালে ছিল ১৭ দশমিক ১, ২০১২ সালে ১২ দশমিক ৭, ২০১১ সালে ২৪ দশমিক ৫ ও ২০১০ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছরের সাত মাসে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

Source