-নিজস্ব প্রতিবেদক
সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দমনে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। তাদের ধরতে প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রাখা হবে। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো কঠোর হওয়ার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে এ-সংক্রান্ত সম্পূরক প্রশ্নটি করেন সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ মাসের পর মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং অনেক টাকা খরচ করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ১৫ দিন না যেতেই তাদের জামিনে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এটা সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যের।'
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'তাদের (জঙ্গি) পক্ষে একজন আইনজীবী থাকবে এটা স্বাভাবিক। বিচারক বিচার করবেন। আমাদের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন। স্বাধীন বলেই কিন্তু তাঁরা এভাবে জামিন দিতে পারছেন। তবে আমি আহ্বান জানাব, জামিন যখন দিচ্ছেন তখন অন্তত ভেবে দেখুন এরা কী দোষটা করেছে।' গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সব ভালো কাজের কিছু খারাপ দিক আছে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল মানুষ পাচ্ছে। এ সুযোগ ব্যবহার করে কিছু কিছু মানুষ ক্রাইম করছে। দুর্ভাগ্য হলো কিছু লোকের মন্দ কাজের জন্য অনেক সময় ভালো মানুষ কষ্ট পায়। তাই সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের ধরতে প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য হলেও ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করা হবে। বন্ধ করে হলেও সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের ধরা হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকে আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন নানা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। সেটা কারা ঘটাচ্ছে? যারা ধরা পড়ছে, তাদের পরিচয়টা কিন্তু এক জায়গায়। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, সেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকেরাই তাদের দোসর। তারাই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন পরিকল্পনায় একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে।'
জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমনে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মাননীয় স্পিকার আপনি আছেন, এখানে সকল সংসদ সদস্য রয়েছেন। একই সাথে দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আমার আহ্বান, সাইবার সন্ত্রাসে যারা লিপ্ত, যারা বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদেরকে যেখানে পান ধরিয়ে দেবেন। তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে হবে।' এ কাজে গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে যাতে কেউ সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।' তিনি বলেন, 'সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি। সার্ক, বিমসটেকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার বিভিন্ন চুক্তির রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। বৈশ্বিক সন্ত্রাস দমন কৌশলের দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে আমরা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।'
তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়ালের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ইতালি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহায়তা করার জন্য গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২ নভেম্বর পর্যন্ত চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় রংপুরের কাউনিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই মামলায় দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে বিদেশিদের হত্যাকারী, পরিকল্পনাকারী এবং এর মদদদাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী এবং বিদেশি হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুসহ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমরের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে আপাতত সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩২ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও থ্রি-ই (ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফোর্সমেন্ট ও এডুকেশন) নিয়ে কাজ করায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ২০০৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল চার হাজার ৪২৭টি এবং এসব দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৭৬৫ জন মারা যায়। ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা দুই হাজার ২৭টিতে নেমে এসেছে এবং মারা গেছে দুই হাজার ৬৭ জন।
Source