-
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) কাছে বিটিআরসির ফ্রিকোয়েন্সি (তরঙ্গ) চার্জ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৬ কোটি ৯৯ হাজার টাকারও বেশি। এ হিসাব গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রায় ১০ বছর ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তরঙ্গ চার্জের টাকা পরিশোধ না করায় এর লেট ফাইন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই লেট ফাইন মওকুফের জন্য আবেদন জানালেও বিটিআরসি তাতে রাজি হয়নি।
বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ অনুযায়ী তরঙ্গ ব্যবহারকারী সরকারের সব প্রতিষ্ঠান বিলম্ব ফি প্রদানে আইনত বাধ্য। এ েেত্র সরকারের অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তির ভিত্তিতে সরকারের অন্যান্য খেলাপি প্রতিষ্ঠান বিলম্ব ফি প্রদান করেছে। ফলে এেেত্রও তা ঘটবে এবং বকেয়া ফি মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। বিটিআরসির সভায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনার পর গত সপ্তাহে এই বক্তব্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিটিআরসিকে দেওয়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিটিভি ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত বিনা চার্জে টেরিস্ট্রিয়াল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু পরে ২০০২ সাল থেকে এই চার্জ দিতে বলা হয়। বিটিভি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই চার্জ মওকুফের জন্য অনুরোধ করলে সেই অনুরোধ রা হয়নি। এ অবস্থায় বিটিভি ২০০৮ সালে আগের সব বকেয়া পরিশোধ করে। বিটিআরসি বিলম্ব ফি বা জরিমানার বিষয়টি ২০০৫ সালে প্রথম উল্লেখ করে। এই বিলম্ব ফি চক্রবৃদ্ধি হারে ১৫৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআরসি বিটিভির কাছে যে বিল পাঠিয়েছে তা নিয়মিত কোনো বিল নয়। এটি পরিশোধ করা বিটিভির পে সম্ভব নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ফ্রিকোয়েন্সি চার্জ পরিশোধে বিটিভির ইচ্ছাকৃত কোনো বিলম্ব নেই। তারপরও বিলম্ব ফি ধার্য হওয়া অস্বাভাবিক। বিটিআরসি বিধি অনুযায়ী সাধারণত পঞ্জিকা বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দাবিনামা জারি করে। আর বিটিভি সাধারণত আগস্ট মাসে অর্থবছরের হিসাবে বাজেট পায়। ফ্রিকোয়েন্সি চার্জ পরিশোধ খাতে বিটিভির বরাদ্দটি দ্বিতারকাবিশিষ্ট। ফলে এ বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করাতে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রয়োজন হয়। এতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় আগস্টের পরেও দুই মাস সময় লাগে। কিন্তু বিটিআরসি দাবিনামা জারির পর মাত্র ১৫ দিন সময় দেয়। চিঠিতে পঞ্জিকা বছরের জুলাই থেকে ৬ মাসের মধ্যে বিলম্ব ফি ছাড়া ফ্রিকোয়েন্সি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু বিটিআরসির ভাষ্য অনুযায়ী, সব সরকারি সংস্থা একই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পায়। সেজন্য অন্য সব সরকারি সংস্থার মতো বিটিআরসির পওে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিটিআরসির রাজস্ব পরিশোধ করা অসম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে বিলম্ব ফি-এর বিধান রাখার উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা বাধ্যতামূলক। না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসি বা সরকারের বিপুল অঙ্কের পাওনা টাকা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখে তা থেকে মুনাফা লুটত।
সূত্র জানায়, সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই অনুরোধ বিবেচনা করতে পারে। তবে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই লেট ফাইন মওকুফ হলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এর সুযোগ নেবে। এতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করবে। সরকারি দুই টেলিকম প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল ও টেলিটকের কাছে গত সাত বছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু কী কৌশলে এ টাকা আদায় হবে সেই বিষয়ে বিটিআরসি এখনো অন্ধকারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনেকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট বিটিআরসি চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়। এ প্রতিষ্ঠান দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে চাইলেও বিটিআরসিকে এর জন্য নির্ধারিত বিধান অনুসারেই দায়িত্ব পালন করতে হবে
Source