খবরের শিরোনামঃ মোবাইল ব্যাংকিং : অপরাধ ঠেকানোর প্রস্তুতি কতটুকু

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১১-১৪

-ফরহাদ হোসেন
দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট না থাকলেও ৬৮ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। এই তথ্যই বলে, মোবাইল ব্যাংকিং-এর উজ্জল সম্ভাবনা প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বদলে যাচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ধরন, বাতিল হচ্ছে পুরনো অনেক অভ্যাস। বদলে যাচ্ছে প্রথাগত ব্যাংকিং সেবাও। টাকা তুলতে ব্যাংকের সামনে চেক হাতে আর দীর্ঘ লাইন নয়, পকেটে থাকা এটিএম কার্ডেই টাকা তোলা যায় রাত-দিন ২৪ ঘন্টা। হাতে নগদ অর্থ না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডে সারা যায় প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। নিকট কি দূরের স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে এখন যেতে হয় না ব্যাংক বা ডাকঘরে। মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে মিনিটেই টাকা পাঠানো যায় দেশের দূরতম অঞ্চলেও। মোবাইল ব্যাংকিং-এর অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এর গ্রাহক সংখ্যা, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায় জুন ২০১৪ সালের তুলনায় জুন ২০১৫’তে মোবাইল ব্যাংকিং-এর গ্রাহক সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ। দিনের গড় লেনদেনের পরিমাণ ৫২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৩২ কোটি টাকা। আর প্রতিদিনের লেনদেনের সংখ্যা ১১৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩২ লাখ। অবিশ্বাস্য জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই মাধ্যমকেই অপরাধের অর্থ লেনদেনে ব্যবহার করছে অপরাধীরা। গোয়েন্দা পুলিশ তথ্যমতে চলতি বছরের প্রথম তিনমাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় মোবাইল ব্যাংকিং এ অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অনুসন্ধান বলছে, অপরাধীরা এখন সরাসরি অর্থ লেনদেন না করে মোবাইল ব্যাংকিংকেই সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি অর্থায়নে মোবাইল ব্যাংকিংকে ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও টেকনাফসহ ছয়টি জেলায় এর আলামতও পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, মোবাইল ব্যাংকিং-এ অনিয়মের শুরুটা হয় এজেন্টদের হাত দিয়ে। মোবাইল ব্যাংকিং-এ অর্থ লেনদেনে (টাকা প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী উভয়েরই) একাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক হলেও একাউন্টবিহীন বহু মানুষের লেনদেনের কাজটি করে দেন এজেন্টরা। এই কাজটি হয় তাদের হাতে থাকা একাধিক সিম ব্যবহার করে, নিজে গ্রাহক সেজে। একারণে অপরাধীরা নিজেদের আড়ালে রেখে চাইলেই এজেন্টের মাধ্যমে অপরাধের অর্থ লেনদেন করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী এজেন্টের কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র গ্রাহকের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে টাকা প্রেরণ অর্থাত্ ক্যাশ ইন ও টাকা উত্তোলন বা ক্যাশ আউট করা। অন্যদিকে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে সিম রেজিষ্ট্রেশন কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলে সহজেই অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায়, থেকে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মোবাইল ব্যাংকিংকে ব্যবহার করে অপরাধ ঠেকাতে এজেন্টদের উপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিম রেজিষ্ট্রেশন, মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে ব্যবহার করা কেওয়াইসি ফরম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে পরিচয়পত্র আসল না জাল তা পরীক্ষা করা যাবে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ ব্যবহার করতে পারলে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল অপারেটর ডাটাবেজ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরই ডাটাবেজ ব্যবহারের অনুমতি দিবে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া সিম বা রিম বিক্রি বন্ধে মোবাইল অপারেটদের প্রতি আবারো কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পাশাপাশি একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একটি মোবাইল অপারেটর থেকে সর্বোচ্চ ৫ এবং সব অপারেটর মিলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫টি সিমের রেজিষ্ট্রেশন দেয়ার বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট না থাকলেও ৬৮ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। এই তথ্যই বলে মোবাইল ব্যাংকিং এর ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা কত বিপুল। অল্পসংখ্যক অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে এই সেবা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বাধাগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা সাধারণ মানুষ। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কারণে যাদের হাতে মিনিটেই পৌঁছে যাচ্ছে পরিবার চালানোর খরচ। তাই অপরাধ বন্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল অপারেটরদের সমন্বিত প্রচেষ্টা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

Source