-সংসদ রিপোর্টার
আইন অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অপরাধের ক্ষেত্রে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার এবং এসব অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন অযোগ্যের বিধান করে গতকাল বহুল বিতর্কিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন-২০১৩’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। মূলত ‘তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৩’কে আইনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যেই এ বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে। ২০০৬ সালের মূল আইনে অধ্যাদেশের মাধ্যমে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছিল, এই বিলে তার সবগুলোই রাখা হয়েছে।
সংশোধিত প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজার বিধান ছিল। আগের আইনে মামলা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হতো। কিন্তু সংশোধিত আইনে পুলিশ অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা করতে পারবে।
১২ সেপ্টেম্বর সংসদের চলতি অধিবেশনের প্রথম দিন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ নিয়ম অনুযায়ী ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধনী)-২০১৩’ অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করেন। এর আগে গত ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরদিনই অধ্যাদেশটির গেজেট প্রকাশিত হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধ্যাদেশ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বিভিন্ন মহল থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। অধ্যাদেশ থেকে বাকস্বাধীনতা হরণের ৫৭ ধারা বাতিল করে জাতীয় সংসদে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের দাবি জানানো হয়। এছাড়া ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশের গ্রেফতারের ক্ষমতা প্রদানেরও সমালোচনা করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ বিলটি উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
মূল আইনের ৫৪ ধারায় বর্ণিত অপরাধ কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির অনিষ্টসাধন, ৫৬ ধারায় বর্ণিত কম্পিউটার সিস্টেমের হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ, ৫৭ ধারায় বর্ণিত ইলেকট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও ৬১ ধারায় বর্ণিত সংরক্ষিত সিস্টেমে প্রবেশ সংক্রান্ত অপরাধের দণ্ড পরিবর্তন করে ‘অনধিক দশ বছর কারাদণ্ডের’ স্থলে ‘অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে’ শব্দাবলী প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
মূল আইনের ৭৬ ধারায় সংশোধনী এনে উপরোক্ত ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১ ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য (কগনিজেবল) অর্থাত্ এসব অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে এবং এসব অপরাধকে অজামিনযোগ্য করা হয়েছে। এই ধারার অনুচ্ছেদ (২) প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে—‘(ক) ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১-এ উল্লিখিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (কগনিজেবল) ও অ-জামিনযোগ্য হইবে এবং (খ) ৫৫, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৬৫-এ উল্লিখিত অপরাধসমুহ অ-আমলযোগ্য (নন-কগনিজেবল) ও জামিনযোগ্য হইবে।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য আইনটি যুগোপযোগী করে বাস্তবতার আলোকে কতিপয় ধারা/উপধারার পরিমার্জন ও সংশোধনের প্রয়োজন অনুভূত হওয়ায় এই বিলটি উপস্থাপন করা হলো।
অর্পিত সম্পত্তি বিল উত্থাপন : অর্পিত সম্পত্তির জন্য আবেদন করার সময়সীমা বাড়িয়ে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল-২০১৩ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা বিলটি উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা করে সংসদে রিপোর্ট দেয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২২ জুলাই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৩ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদে অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তা অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। অধ্যাদেশটি পরবর্তীতে আইনে পরিণত করতে সংসদে উপস্থাপনের ৩০ দিনের মধ্যে বিল আকারে পাস করানোর বিধান আছে। অর্পিত সম্পত্তির জন্য আবেদন করার শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। যারা আবেদন করতে পারেননি, তাদের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়াতে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ আগস্ট অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি। দুটি ‘ক্যাটাগরিতে’ অর্পিত সম্পত্তির তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি সরকারের দখলে রয়েছে বা ইজারা দেয়া হয়েছে। আর ‘খ’ তালিকার সম্পত্তি সরকারের দখলে বা ইজারায় নেই। এর মধ্যে ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে ৬১টি জেলায় একটি করে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আদালত (ট্রাইব্যুনাল) এবং আপিল ট্রাইব্যুনাল করার প্রস্তাব গত এপ্রিলে অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। সরকারি হিসাবে দেশে অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ৬ লাখ ৬০ হাজার একর।
এছাড়া পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার (সংশোধন) বিল-২০১৩ সংসদে পাস হয়। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ২০১০ সালে প্রণীত এ আইনের ৫(১) ধারায় গঠিত উপদেষ্টা কমিটিতে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান, জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন ও জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে বিলটি পাস হয়।
Source