-আরিফুজ্জামান তুহিন
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো গত রবিবার থেকে পর্যায়ক্রমে ১৩ কোটিরও বেশি গ্রাহকের সিম পরীক্ষামূলকভাবে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে প্রথম দিন কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা গ্রাহকের আঙুলের ছাপের (বায়োমেট্রিক) সঙ্গে ফোন কম্পানির কাছে বর্তমানে গ্রাহকের দেওয়া ছাপ মেলেনি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সিম পুনর্নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে এ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এ সময়ের মধ্যে তাদের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহকের সিম পুনর্নিবন্ধন করা সম্ভব নয়।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের (অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়ছে, এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহকের সিম নিবন্ধন করার মতো কারিগরি সক্ষমতা নেই গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল, টেলিটক ও সিটিসেলের। তবে সরকার তাদের কথা আমলে না নিয়েই সিম নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেছে। আর তাতেই এসব বিপত্তি বেধেছে।
এ ছাড়া চলতি বাজেটে প্রতিটি সিম কার্ড পুনর্নিবন্ধনের জন্য সরকারকে ১০০ টাকা করে দিতে মোবাইল অপারেটরদের ওপর ফি ধার্য করে সরকার। তবে গতকাল সোমবার অ্যামটব মন্ত্রণালয়কে আরেকটি চিঠি দিয়ে এই ফি মওকুফের অনুরোধ জানিয়েছে।
জানা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সব তথ্য সরকারের ভাণ্ডারে রাখার জন্য সিম নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিম নিবন্ধন করা গেলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপরাধ তৎপরতা শনাক্ত করা যাবে, অপরাধীদের দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত করতে পারবে। এ জন্য গত রবিবার থেকে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাহকের আঙুলের ছাপের মাধ্যমে সিম নিবন্ধন শুরু করে সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকসহ আরো পাঁচটি বেসরকারি মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সিম পুনর্নিবন্ধন। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এর পরও যারা অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করবে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হবে। কোনো গ্রাহক এ সময়ের মধ্যে সিম পুনর্নিবন্ধন না করলে তাকে সতর্ক করতে পহেলা বৈশাখের পর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত তার সংযোগ বন্ধ রাখা হবে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।
অ্যামটবের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লোকবল সংকটের কারণে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সিম পুনর্নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয়। কারণ পাঁচটি বেসরকারি (টেলিটক বাদে) মোবাইল ফোন কম্পানির পাঁচ হাজার ৭৬১টি আউটলেট রয়েছে। সব আউটলেট মিলে এক মাসে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০টি সিম পুনর্নিবন্ধন করতে পারবে। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া উল্লিখিত সময়ের মধ্যে এই লোকবল দিয়ে সব সিম নিবন্ধন করা সম্ভব নয়। এ জন্য বাড়তি সময় প্রয়োজন।
তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ রকম কোনো চিঠির ব্যাপারে আমি অবগত নই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েক হাজারের মধ্যে মাত্র দুটি ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ মেলেনি। পরে একজন গ্রাহকের আঙুলের ছাপ মিলে যায়। বর্তমানে একটির ক্ষেত্রে অমিল রয়ে গেছে। আমরা একজনের সমস্যাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সেটি কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে আমরা বৈঠকে বসব। এখন ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক) চলছে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করব।’
জানা গেছে, মোবাইল ফোনের সিম পুনর্নিবন্ধনের বিষয়ে বিটিআরসি একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সিম পুনর্নিবন্ধন করার জন্য মোবাইল ফোনের অনুমোদিত পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হবে। শুধু সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের নির্দিষ্ট কাস্টমার কেয়ারে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, পাসপোর্টের মতো অনুমোদিত পরিচয়পত্র দিয়েও সিম নিবন্ধন করা যাবে। যে নতুন সিম কিনবে, তাকে যেমন এ পদ্ধতি অনুসরণ করে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, তেমনি যে গ্রাহক আগেই সিম কিনেছে, সেটি যদি সঠিকভাবে নিবন্ধিত হয়ে না থাকে, তাহলে তার জন্যও এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। আবার হারিয়ে যাওয়া সিমটি প্রতিস্থাপন করতে হলেও এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে।
Source