-এম. মিজানুর রহমান সোহেল
দেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকের উন্নয়নে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বেগম তারানা হালিম। টেলিটক ব্যবহারে সমস্যা, সমাধান এবং পরামর্শ জানতে প্রথমবারের মতো ফেসবুকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন করেছেন তিনি। সোমবার রাত ১১টায় তার ফেসবুক পেজে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন, দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। যারা রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের উন্নয়ন কামনা করেন, অনুগ্রহ করে আপনাদের পরামর্শ এবং অভিযোগগুলো এখানে লিখুন। টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যরা এগুলো একটি সভায় প্রদর্শন করা হবে, যাতে তারা এর নেটওয়ার্ক এবং সেবার মান উন্নয়ন করতে পারেন।
ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই দুই শতাধিক সমস্যা লিখেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। কমেন্ট বক্সে অধিকাংশ মানুষ টেলিটকের নেটওয়ার্ক সমস্যা, প্রচার-প্রচারণার অভাব, ইন্টারনেটের স্পিড কম, গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের দুর্ভোগ এবং প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অপসারণের দাবি করেছেন। এখানে সেরা কয়েকটি পরামর্শ সবার অবগতির জন্য দেয়া হল। মাহিন রেহমান লিখেছেন, আমার অভিযোগÑ ১। নেটওয়ার্কের মান খুবই বাজে। ২। অদক্ষ কাস্টমার ম্যানেজার। ৩। খুবই সীমিত অফার। ৪। কল-ড্রপ। ৫। নতুন কোনো কলরেট নেই। প্রতিটা কোম্পানি যেখানে নিত্যনতুন কলরেট দিচ্ছে টেলিটক এখনও ৫ সেকেন্ড পালসে আটকে আছে। আর আমার পরামর্শ- ১। সবার আগে নেটওয়ার্ক উন্নত করতে হবে। ২। অন নেটে ২৫ পয়সা মিনিট এবং অফনেটে ৬০ পয়সা বা তার চেয়ে কম কলরেট দিতে পারেন সঙ্গে প্রতি সেকেন্ড পালস থাকতে হবে। ৩। নামটায় পরিবর্তন আনতে হবে। ৪। বন্ধ সিমে ৩০ দিন পরপর নতুন ডেটা এবং বোনাস মিনিট অফার দিতে পারেন এতে তরুণ গ্রাহক বৃদ্ধি পাবে। ৫। অসাধু কর্মকর্তাদের টেলিটক থেকে বিতাড়িত করতে পারেন। মূলত টেলিটকের বর্তমান বেহাল দশার জন্য এরা অনেকাংশে দায়ী। ৬। প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে অনেক ব্যাপকতা ও সৃজনশীলতা আনতে পারেন। ৭। নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারেন। যেমন ৪০ টাকায় ১ জিবি। মাননীয় মন্ত্রী আপনি টেলিটকের নেটওয়ার্ক মান উন্নত করুন এবং কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমিয়ে আনুন। বিলিভ মি দেশের লাখ লাখ তরুণ টেলিটক ব্যবহার করবে কারণ এই তরুণদের দেশের প্রতি মমত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতা আছে। শাওন উইংগার লিখেছেন, বাসার বারান্দায় থ্রিজি আর রুমে ঢুকলেই টুজি।
তাই বাধ্য হয়েই অন্য অপারেটরে চলে গেছি। আর স্পিড অন্যদের তুলনায় অনেক কম। ১০ ভাগের এক ভাগ। সবচেয়ে বড় সমস্যা একটি মোবাইল নম্বর পরিচয় বহন করে। গ্রামে গেলাম নেটওয়ার্ক নেই। তাহলে এই সিম কি করে আমি সর্বদা ব্যবহার করব? তারপরও আবার ১২/০৬/১৫ তারিখে বর্ণমালা সিমের রেজিস্ট্রেশন করলাম। আজও পাইনি। ফেসবুকের পেজ থেকে বলল যে কাস্টমার কেয়ারে যান। কাস্টমার কেয়ার বলল ১২১-এ কল করেন। ১২১-এ প্রতিনিধি বলল, এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি বললাম দরকার নেই বর্ণমালার, এমনিতেই আমি অনেক শিক্ষা লাভ করেছি। মাহবুবুর রহমান রাতিন লিখেছেন, কাস্টমার সার্ভিসটা ইমপ্র“ভ করা প্রয়োজন সেটা কল সেন্টার থেকে শুরু করে কেয়ারগুলো পর্যন্ত কারণ এসব জায়গার সার্ভিস অত্যন্ত বাজে! আমাদের দেশী কোম্পানি হিসেবে আমরাও চাই টেলিটক দ্রুত উন্নতি করুক কিন্তু বারবার আমাদের হতাশ হতে হয়! বিদেশী কোম্পানিগুলোর সার্ভিস কলরেট ডেটা প্ল্যান কোনোকিছুর সঙ্গেই টেলিটক কুলোতে পারছে না। একটা সিম কিনতে গিয়ে আমার দেড় ঘণ্টা ওয়েট করে ফেরত আসতে হয়েছে! মাননীয় মন্ত্রী অদক্ষ দুর্নীতিবাজ লোক দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। উল্লেখ্য, বিষয়গুলোর খুব দ্রুত সমাধান চাই, যাতে আমরাও গর্ব নিয়ে বলতে পারি টেলিটক আমাদের ফোন! সৌরভ দাস লিখেছেন, কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে হবে। প্রচারে আরও বেশি চাকচিক্য, অফারে সরলতা এবং আধিক্য আনতে হবে। গ্রাহক এখন অনেক কিছু বোঝে, ২০০৫-০৬ সালের নস্টালজিক মাইন্ডে চলে না। সুতরাং শর্ত প্রযোজ্য টাইপ অফার দিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করলে নিজের পায়েই কুড়াল মারা হবে।
এছাড়াও নেটওয়ার্ক সার্ভিস আরও উন্নত করতে হবে। গ্রামগঞ্জে সর্বত্র নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হবে। ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে হবে এবং নেট কানেকশনে ড্রপ আউট হ্রাস করতে হবে। লোগো আর নামটাও চেঞ্জ করতে পারেন। আকর্ষণীয় কোনো বাংলা নাম দিতে পারেন। যেমন বন্ধন ইত্যাদি।
Source