-সুমন আফসার
ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহকপর্যায়ে সংযোগ প্রদানে বিধিনিষেধ রয়েছে। যদিও তা মানছে না বিডব্লিউএ লাইসেন্সপ্রাপ্ত অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বিডি লিমিটেড (কিউবি)। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সংযোগ প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে কিউবি। এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবাটি চালুুও করা হয়েছে। মূলত ওয়াইম্যাক্স ডঙ্গল বা ওয়াইফাই প্রযুক্তির মতো তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে এসব গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্য আকর্ষণীয় বিপণন কৌশলও অবলম্বন করছে কিউবি।
তবে গ্রাহকপর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করে অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বিডি লিমিটেডের (কিউবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হায়দার জানান, মূলত বিটিএসগুলোয় অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সংযোগ দেয়া হয়। আর গ্রাহকপর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই সংযোগ দেয়া হয় ওয়াইফাইর মাধ্যমে।
বিডব্লিউএ লাইসেন্সিং নীতিমালার ধারা ৮- এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, গ্রাহকপর্যায়ে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ওয়াইম্যাক্সের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কেবল, ফাইবার অথবা অন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে কেবল ও ফাইবার ব্যবহার করা যাবে না।
বিডব্লিউএ লাইসেন্সের আওতায় বর্তমানে দেশে তিনটি প্রতিষ্ঠান ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। বাংলালায়ন, কিউবি এবং ওলো ব্র্যান্ড নামে এ সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠান তিনটি। ২০০৮ সালে নিলামের মাধ্যমে লাইসেন্স পায় বাংলালায়ন ও কিউবি। ২০১৩ সালে এ লাইসেন্সের আওতায় সেবা চালু করে ওলো।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র মো. সরওয়ার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুযায়ী বিডব্লিউএ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অপটিক ফাইবার কেবলের মাধ্যমে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেবাদানের এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নিলামের মাধ্যমে ২১৫ কোটি টাকা দিয়ে বিডব্লিউএ লাইসেন্স নেয় বাংলালায়ন ও কিউবি। ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের নিলামের ক্ষেত্রে এ দর বিশ্বে সর্বোচ্চ। এর আগে সিঙ্গাপুরে প্রতিটি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের জন্য দর উঠেছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। উচ্চমূল্যে লাইসেন্স নেয়ার পর ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে হুমকির মুখে পড়ে দুটি প্রতিষ্ঠানই।
নীতিমালা অনুযায়ী, ফি জমাদানের নির্দেশদানের দশ কার্যদিবসের মধ্যে লাইসেন্স ফির ৫০ শতাংশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই নিলামের দর অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে বলা হলেও বিটিসিএল আর্থিক কারণ দেখিয়ে ফি জমাদানের সময় বাড়ানোর আবেদন করে। পর্যায়ক্রমে এ অর্থ পরিশোধের সুযোগ চায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে লাইসেন্স নেয়া দুটি অপারেটরই নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স নিয়েছে। ফলে বিটিসিএলের জন্য এটি শিথিল করার সুযোগ নেই বলে জানায় কমিশন।
গত দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক হারাচ্ছে ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৩ সালের জুনে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় সংযোগ সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৪ হাজার ৮০৮। একই বছরের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫, যা গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ আরো কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৯১১। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের নেটওয়ার্কে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার।
কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে কিউবির সংযোগ সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৩১৭। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ লাখ ৭ হাজার ৯০৬; ১ লাখ ২৬ হাজার ২৮৬ ও ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৬। এর পরের বছরই ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় গ্রাহক হারায় কিউবিও। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯৩। আর চলতি বছরের জুন নাগাদ কিউবির সেবার আওতায় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭৯৮।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা অনেক দিন ধরেই অসন্তুষ্ট। দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনাসহ আরো বেশকিছু কারণে তৈরি হয়েছে এ অসন্তোষ। এছাড়া সম্প্রতি চার সেলফোন অপারেটরের থ্রিজি সেবা চালু হওয়ায় তারবিহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হওয়ায় ওয়াইম্যাক্স সংযোগ বন্ধ করছেন অনেকেই। তবে এলটিই প্রযুক্তি চালু হলে আরো অনেক গ্রাহককে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানের সক্ষমতা তৈরি হবে ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের। ফলে গ্রাহকসেবার মানও উন্নত হবে এসব প্রতিষ্ঠানের।
Source