খবরের শিরোনামঃ ধৈর্য ধরতে বললেন তারানা হালিম

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১১-২৩

-নাজমুল লিখন:
স্ বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই সরকারিভাবে চালু হবে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বন্ধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ঠিক কবে নাগাদ এগুলো চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুয়েক দিনের মধ্যেই ফেসবুক খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে ভাইবারসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পরিস্থিতি বুঝে চালু করবে সরকার। যদিও অনেকেই এখন বিকল্প উপায়ে ব্যবহার করছেন এসব যোগাযোগ মাধ্যম। জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল রাতে সকালের খবরকে বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন মনে করবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক তখন তারা আমাদেরকে জানালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে এগুলো চালু করে দেব। অনেকেই বলছেন, দুজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তারপর সরকার এগুলো চালু করছে না কেন? জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা এসব কথা বলছেন তারা শুধু নিজের নিরাপত্তার কথাই হয়তো চিন্তা করছেন। কিন্তু আমাদেরকে সবার নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। কেন আমরা ফেসবুককে এত বেশি জরুরি মনে করছি? এটা কী একটা জীবনের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান? ফেসবুকে অপপ্রচার বা উস্কানিমূলক বক্তব্য, বিবৃতির কারণে যদি একটা জীবনও বিপন্ন হয় তাহলে তার দায়ভার কে নেবে? আমরা যারা এই দেশটাকে ভালোবাসি তারা কেন বৃহত্তর স্বার্থে সামান্য একটু ধৈর্য ধরতে পারব না? দেশপ্রেমের জন্য এইটুকু পরীক্ষা দিতে পারব না? সবাইকে শুধু একটা কথাই বলব, শুধু নিজের কথা নয়, আপনার পাশের মানুষের কথাও চিন্তা করুন। দেশের স্বার্থে একটুখানি ধৈর্য ধরুন। তারানা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ফ্রান্সের ওই দুর্ঘটনার পর সেখানে সাময়িক সময়ের জন্য পুরো ইন্টারনেটই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে। ওইসব দেশের মানুষ এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয়। অথচ আমরা কেন সেটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারব না? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই বিকল্প উপায়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এগুলোও আমরা মনিটরিং করছি। এতে নজরদারি করা সহজ হয়েছে। কারণ একটা রাস্তায় যদি পাঁচশ’ হাজার গাড়ি চলাচল করে সেই একই রাস্তায় যদি ২০টা বা ৩০টা গাড়ি চলে তাহলে তা মনিটরিং করা খুবই সহজ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, এসব মাধ্যম বন্ধ রাখার কারণে মানুষ কত উপকৃত হচ্ছে। কত ঝুঁকি কমেছে। চাইলে আপনারাও এর তথ্য নিতে পারেন। ভবিষ্যতের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তার তিনটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে নিচের দিকের দুটি স্তর নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি, আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে সফল হব। তখন হয়তো আর এসব সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ করা লাগবে না। চালু থাকলেও এগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আরেকটি স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিদেশ থেকে ইন্টারনেট সেফটি সলুউশন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আনা হবে খুব শিগগির। এ ছাড়া ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। অলরেটি আইটিউর (আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন) মাধ্যমে বলে এসেছি। এই চুক্তি হলে ফেসবুকে আপত্তিকর বিষয়গুলো ‘ফিল্টারিং’ করা যাবে। সেইসঙ্গে এর নিয়ন্ত্রণও আমরা করতে পারব। এর আগে বিএনপিকে ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা সেটা করেনি। সেই কাজটা আমরা এখন করব। নিরাপত্তার কথা বলে বুধবার সরকারিভাবে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই নির্দেশ জারি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ২১ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ওই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব মাধ্যম ব্যবহার করে যাতে কোনো ধরনের উস্কানি দিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি না করা যায় এবং কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজ সঙ্ঘটিত করতে না পারে সেজন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

Source