-শাহিদ বাপ্পি
বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে বিদেশী কোনো স্যাটেলাইট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাইলে তাদেরকে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নির্ধারিত ফি দেওয়ার শর্তে তারা স্যাটেলাইট ডাউনলিংক তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতি পাবে। এর জন্য একটি গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব আয়ের আরেকটি খাত সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ১৯০তম কমিশন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিটিআরসি বলছে, কোনো অনুমতি ছাড়াই বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ডাউনলিংক তরঙ্গ ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। স্থানীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে তারা বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে স্যাটেলাইট ল্যান্ডিং রাইট সম্পর্কে কোনো নীতিমালা বা বিধি-বিধান না থাকায় সরকার তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এ অবস্থায় বিটিআরসি কমিশনার স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্টের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে কমিটির মাধ্যমে দ্রুত স্যাটেলাইট ডাউনলিংক তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত এবং ফি নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। কমিটিকে চলতি মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, দেশে প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় দুই লাখ ডলার দিয়ে থাকে। বর্তমানে টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০ লাখ ডলার বিদেশি স্যাটেলাইটকে ভাড়া দিচ্ছে। কিন্তু এ খাত থেকে সরকার কিছুই পাচ্ছে না।
বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র মো. সরওয়ার আলম বলেন, বিদেশি স্যাটেলাইট প্রভাইডারদের কাছ থেকে ডাউনলিংক তরঙ্গ গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব আয়ের আরেকটি খাত সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের নভেম্বরে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও বায়ার মিডিয়া লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ সেবাদানের লাইসেন্স দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। ডিটিএইচের মাধ্যমে ক্যাবল অপারেটরের সংযোগ ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখা সম্ভব। সেট-টপ-বক্স, এলএনবি ও ক্ষুদ্রাকৃতির একটি অ্যান্টেনার সমন্বয়ে সরাসরি বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে পাবেন গ্রাহক। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে চ্যানেলগুলোর ছবি ও শব্দ আসে ক্যাবল সংযোগের চেয়ে দ্রুত। এ ছাড়া সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ডাউনলিংক তরঙ্গের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিটি চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান থাকে একই রকম।
সম্প্রতি বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের অনুকূলে স্যাটেলাইট ডাউনলিংক তরঙ্গ বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় বেতার যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহারে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। ওই আবেদন পর্যালোচনা করতে গিয়েই বিটিআরসির কর্মকর্তারা কোনো অনুমতি ছাড়াই দেশে বিদেশি স্যাটেলাইট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমলে নেন। তাছাড়া ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (যোগাযোগ উপগ্রহ) বঙ্গবন্ধু-১ উৎপেণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহারের বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিটিআরসি। ফ্রান্সের কোম্পানি থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট তৈরির কাজ করবে।
Source