-বণিক বার্তা ডেস্ক
আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ অঞ্চলে বেকারত্বের হার বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অঞ্চলগুলোর টেলিযোগাযোগ সেবা খাতের ওপর। তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে আশাবাদী নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ নির্মাতা নকিয়া। গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাত্কারে প্রতিষ্ঠানটির এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা এ কথা বলেন। খবর রয়টার্স।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি নকিয়ার পরিচিতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু বর্তমান মোবাইল ডিভাইস বাজারে এক সময়ের জনপ্রিয় সেলফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির উপস্থিতি নেই বললেই চলে। মূলত গত শতাব্দীর শেষ দিকে ও এ শতাব্দীর শুরুর দিকে সফলতার শিখরে পৌঁছে নকিয়া। এ সময় বিশ্বের শীর্ষ সেলফোন নির্মাতার আসন দখলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এবং অ্যাপলের দৌরাত্ম্যের কারণে মোবাইল ডিভাইস বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এতে ২০১৪ সালে লোকসানে থাকা সেলফোন বিভাগ মার্কিন প্রভাবশালী সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। বলা হচ্ছিল, আর কখনই হয়তো সেলফোন ব্যবসায় ফিরবে না নকিয়া। কিন্তু সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে নিজস্ব ব্র্যান্ড নামে নতুন মোবাইল ডিভাইস আনতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডিভাইস ব্যবসার পরিবর্তে নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ নির্মাণেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা, যার ইতিবাচক ফল এরই মধ্যে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আফ্রিকায় ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দুর্বল মুদ্রার কারণে অপারেটর কোম্পানি এবং সরকারের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে চুক্তি, সেগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উভয় পক্ষেরই উপরে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একীভূতকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি নকিয়ার মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশাবাদী করে তুলেছে।
এ বিষয়ে নকিয়া সলিউশন এবং নেটওয়ার্ক বিভাগের দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান ডিওন গাইজার বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আফ্রিকায় ব্যবসা সম্প্রসারণে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প পন্থা অবলম্বন করছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান একীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যবসা প্রসারে কাজ করছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের প্রবণতাকে সমর্থন দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ফলে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান। অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত স্পেকট্রামের মালিকানা পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো, যা থেকে ইতিবাচক সুবিধা নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরগুলো।
এছাড়া ডিওন গাইজার বলেন, ‘আমাকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তাঞ্জানিয়া পর্যন্ত নকিয়ার ব্যবস্থাপনার বিষয় দেখভাল করতে হয়। এ অঞ্চল রফতানিদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে তেলের মূল্য হ্রাস সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরবর্তীতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে টেলিযোগাযোগ অপারেটর ও নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।’
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আফ্রিকা অঞ্চলের অন্য ব্যবসা খাতগুলো যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সে তুলনায় কম ক্ষতির মুখে পড়েছে টেলিকম খাত। অর্থাৎ মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতায় খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, যা আফ্রিকার বাজার নিয়ে নকিয়াকে আশাবাদী করে তুলেছে।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য না এলেও ভয়েস এবং ডাটা ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো।
গত মাসে প্রকাশিত নকিয়ার তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান্য বিস্তার করে থাকা নকিয়ার নেটওয়ার্ক বিভাগের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে মোট ২৮৮ কোটি ইউরো (৩০৯ কোটি ডলার), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ কম। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। যাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে নিট বিক্রির মোট ২৭ কোটি ৮০ লাখ ইউরো এসেছে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা অঞ্চল থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে ১ শতাংশ বেড়েছে।
ডিওন গাইজার বলেন, ‘আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একত্রীকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি আমাদের জন্য ইতিবাচক। ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অ্যালকাটেল-লুসেন্টকে অধিগ্রহণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে নকিয়া।’ এটি প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
Source