-বণিক বার্তা ডেস্ক
রেস্তোরাঁ খোঁজার ভারতীয় অনলাইন সেবা জোমাটো ৩০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। অনলাইনে সরবরাহ আদেশের ভিত্তিতে দেশটির খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টিনিওলের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা আরো বড়; প্রায় ৬০০। একই পথে হেঁটেছে দেশটির প্রপার্টি পোর্টাল হাউজিং ডটকমসহ বেশকিছু নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ভারতের প্রযুক্তি খাতের নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্মী ছাঁটাইয়ের এ ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভারতের প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তাদের আশাজাগানিয়া উত্থানের কি তবে এখানেই শেষ? এমন প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর এখন পাওয়া না গেলেও এর সপক্ষে যুক্তি সময়ের সঙ্গে শক্তিশালী হচ্ছে। খবর এএফপি।
গত কয়েক বছরে ভারতের প্রযুক্তি খাতে বেশকিছু নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এদের প্রাথমিক গতির কারণে খাতসংশ্লিষ্টদের আশাও একটু বেশিই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি আর আগের মতো নেই। জোমাটো, টিনিওল, হাউজিং ডটকমের মতো খাতটির অতিমূল্যায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আশা জাগিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না।
মূলত উদ্যোক্তাদের হাতেই থাকে কোনো অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবি। আর এ ধারণা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাইছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত সেপ্টেম্বরে সিলিকন ভ্যালির মতো জায়গায় গিয়ে তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। এ উদ্যোগ পরোক্ষভাবে দেশটিতে পরবর্তী ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারই আগ্রহেরই ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ভারতের নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই পরবর্তী গুগল বা ফেসবুক হওয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা, তা-ই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
নতুন উদ্যোগের কারণে ভারতে বহির্বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। এ বিষয়ে মুম্বাইয়ের ক্যাপিটাল পোর্টফোলিও অ্যাডভাইজরসের বিনিয়োগ পরামর্শক পরশ অ্যাডেনওয়ালা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা খাতটির সামগ্রিক অবস্থা দেখছেন না। তারা কিছু সাফল্য দেখছেন এবং তাতেই বিনিয়োগ করছেন। তারা ব্যর্থতাগুলো দেখছেন না।’ বিনিয়োগকারীদের এ প্রবণতা ২০০০ সালের দিকে ডটকম যুগেও দেখা গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে সে সময়ের উত্থান দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। এবারো একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।
চীনের বিএটি জোট এরই মধ্যে ভারতের নতুন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে বলে জানায়। তারা উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান পেলে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এ জোটে রয়েছে বাইডু, আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো চীনের বড় তিনটি প্রতিষ্ঠান। তারা বড় বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও এ সুযোগ ভারতের নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কতটা এগিয়ে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ভারতের বাজার প্রযুক্তি খাতের জন্য যে আগামী বছরগুলোয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে, তা বলাই বাহুল্য। লেনোভোর চেয়ারম্যান ইয়াং ইউয়ানকিং এমন আভাসই দিয়েছেন। তার মতে, ভারতের মতো বাজারে কম্পিউটারের চাহিদা বাড়বে। এখানে তার প্রতিষ্ঠান বড় সম্ভাবনা দেখছে। কিন্তু এ ধরনের সম্ভাবনা দেশটির বাজারে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়াবে। দেশটির নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যত্ কী হবে, তা নির্ভর করছে নতুন উদ্যোগগুলোর সময়োপযোগিতার ওপর।
Source