-বণিক বার্তা ডেস্ক
অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক। সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশী বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, টেলিটকের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ পেতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এরই মধ্যে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পের ভিত্তিতে অর্থায়ন না নিয়ে বরং সহজ শর্তে ঋণ বা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যে এ আলোচনা চলছে। উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রচারণারও। যথাযথ নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে আবেদন করার লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বণিক বার্তাকে বলেন, টেলিটকে বিদেশী বিনিয়োগ আনতে আলোচনা চলছে। বড় ধরনের বিনিয়োগ পেলে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক ও সেবার মান আরো উন্নত হবে। ফলে খাতটিতে অন্যরাও প্রতিযোগিতামূলকভাবে মানসম্পন্ন সেবা দিতে এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারী আকর্ষণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এগুলো কার্যকর হলে দেশের টেলিযোগাযোগ বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখলে নিতে পারবে টেলিটক।
টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে টেলিটক। গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের বিনিয়োগ এক্ষেত্রে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া নেটওয়ার্ক খাতে বাংলালিংক বিনিয়োগ করেছে ২৮ হাজার কোটি, রবি ২৫ হাজার কোটি, এয়ারটেল ১৪ হাজার কোটি ও সিটিসেল ৫ হাজার কোটি টাকা।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে টেলিটক। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা। পরের বছর ৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সেলফোন সেবাদান শুরু করে টেলিটক।
পরবর্তীতে টেলিটকে অর্থায়ন করা হয়েছে প্রকল্পের ভিত্তিতে। থ্রিজি প্রযুক্তি চালু ও বিদ্যমান টুজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বরে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে টেলিটক। ২১ কোটি ১০ লাখ ডলারের এ প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় টুজি ও থ্রিজি সেবা সম্প্রসারণ করছে টেলিটক। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ৬৫ লাখ গ্রাহককে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগ সীমিত হওয়ায় প্রত্যাশিত মাত্রায় থ্রিজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, নেটওয়ার্ক অবকাঠামো বিনির্মাণ ও সম্প্রসারণে প্রাথমিকভাবে সেলফোন সেবা খাতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। বেসরকারি খাতের অন্য পাঁচ সেলফোন অপারেটরের তুলনায় টেলিটকের বিনিয়োগ সামান্যই। আর বিনিয়োগ কম হওয়ায় অন্য অপারেটরদের মতো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এতে গ্রাহকদের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে না।
মূলত চারটি লক্ষ্য নিয়ে টেলিটক প্রতিষ্ঠা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে সেলফোন সেবা প্রদান, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সেলফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, সেলফোন সেবার উচ্চচাহিদার একটি অংশ পূরণ ও রাজস্ব আয়ে সরকারের একটি নতুন উৎস তৈরি।
২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর বাণিজ্যিক পরীক্ষণের ভিত্তিতে থ্রিজি প্রযুক্তির সেবা চালু করে টেলিটক। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটককে সেবাটি চালুর অনুমতি দেয়া হয়। পরে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের চার প্রতিষ্ঠান থ্রিজির লাইসেন্স পায়। একই বছর প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে সেবাদান শুরু করে।
বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ৪১ লাখ ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। সারা দেশে টেলিটকের টুজি ও থ্রিজি বিটিএসের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ৫০০ ও ১ হাজার ৫০০।
এদিকে টেলিটকের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। থ্রিজি সেবাদানে ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ নিলেও অর্থ পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
Source