-বিশেষ প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুদের চাপে সঞ্চয় থাকে না বলেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থায় গ্রহীতাদের পক্ষে দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এ কারণে সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় বৃদ্ধি ও পল্লী কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণের ব্যবস্থা করেছে। একই সঙ্গে খামার থেকে তাদের উত্পাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, সঞ্চয়ে উত্সাহিত এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতায় গ্রামীণফোনের থ্রিজি নেটওয়ার্ক উদ্বোধনকালে তিনি আরো বলেন, আমরা জানি, মাইক্রোক্রেডিটের সুদ দিতে দিতে তাদের আর সঞ্চয় থাকে না। কাজেই দারিদ্র্যের লেভেল থেকে তারা উঠতে পারে না। ওখানেই তাদেরকে পড়ে থাকতে হয়।
দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও পরে তা সংশোধন করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সারাদেশে ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় উত্পাদিত পণ্যের বাজারজাতে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ‘গ্রোথ সেন্টারে’ এসব পণ্য বিক্রির জন্য সমবায়ভিত্তিক বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সঞ্চয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা, কেউ যদি একশ টাকা জমাতে পারে, সরকার সেখানে আরও একশ টাকা দেয়। দুই বছর পর্যন্ত আমরা সেভাবে দিয়ে থাকি। এভাবে টাকা দেয়ার ফলে যে অর্থ জমেছে সেটা দিয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আমরা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যাংকে যারা টাকা জমাচ্ছেন, এটা তাদেরই ব্যাংক, তারাই পরিচালনা করবেন এবং ঋণ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্টারনেট সেবার মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইন্টারনেট এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে। এজন্য তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে ভালভাবে জীবনযাপন করতে চায়। সরকারও জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণ করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের চিত্র এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষ কীভাবে কৃষি ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে সে কথাও তুলে ধরে বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পাশাপাশি দেশের ৮০০০ পোস্ট অফিসের মধ্যে ৩৫০০ পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল সেন্টার পরিণত করা হয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে। দেশের মানুষের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারে। দহগ্রামের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছিটমহল না হলেও ভারতের করিডোর ব্যবহার করে সেখানে পৌঁছাতে হত। তার সরকারের উদ্যোগে সেখাতে চলাচলের জন্য প্রথমে ছয় ঘণ্টা পরে ২৪ ঘণ্টা করিডর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লালমনিরহাটসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যান্ডউইথের স্পিড ও আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ভিডিও কনফারেন্সে লালমনিরহাট প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব শেঠি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম ফাইজুর রহমান চৌধুরী এবং সরকারের ও গ্রামীণফোনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
আমাদের পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দহগ্রাম থেকে ফেরার পথে দহগ্রাম কড়িডোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ও পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
Source