-অর্থসূচক ডেস্ক
মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার আবেদনের নিষ্পত্তি কেন করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এয়ারটেলের এক গ্রাহকের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ফরিদ আহমদ শিবলীর বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেন।
আদেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাণিজ্য সচিব, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা (কমপিটিশিন) কমিশনের সচিব, টেলিকম সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এবং রবি ও এয়ারটেল কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নাজমুস সাকিব আল আযম নামের আবেদনকারীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম।
ইউসুফ আলী বলেন, ‘দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদন করলে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের মার্কেট শেয়ারের ৯৬ শতাংশ চলে যাবে তিনটি কোমপানির হাতে। এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবে, প্রতিযোগিতা না থাকলে গ্রাহকরাও বঞ্চিত হবেন।’
প্রসঙ্গত, ব্যবসার সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির জন্য ২০১২ সালের জুনে সরকার ‘প্রতিযোগিতা আইন’ করে, যাতে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের কথা বলা হয়।
তবে গত সেপ্টেম্বরে ব্যবসা একীভূত করার অনুমতি চেয়ে বিটিআরসিতে চিঠি দেয় রবি ও এয়ারটেল। চিঠিতে বলা হয়, একীভূত হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ ও এনটিটি ডকোমার কাছে; বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে ভারতি এয়ারটেলের কাছে।
এতে বলা হয়, দুই অপারেটর একীভূত হওয়ার পর যৌথ গ্রাহকদের কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তবে তিন বছর পর থেকে ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না বলে বিটিআরসিতে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়।
ওই চিঠি পাওয়ার পর দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার প্রভাব বিশ্লেষণে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি।
বিটিআরসিতে জমা দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এয়ারটেলের সব দায়-দেনার দায়িত্ব নেবে রবি। ভারতী এয়ারটেলের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত এয়ারটেল বাংলাদেশের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।
১৯৯৬ যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রবি বাংলাদেশে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আর এখন পর্যন্ত এ দেশে এয়ারটেল বিনিয়োগ করেছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
দেশজুড়ে রবির গ্রাহক সংখ্যা অক্টোবরের হিসেবে ২ কোটি ৮২ লাখ। আর এয়ারটেলের মোট গ্রাহক ৯৯ লাখ। সে হিসেবে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হলে নতুন কোম্পানির মোট গ্রাহক হবে ৩ কোটি ৮০ লাখের মতো।
সারা দেশে রবি ও এয়ারটেলের মোবাইল টাওয়ার আছে ১৪ হাজারের বেশি, এর মধ্যে রবির টাওয়ার সংখ্যা ৮ হাজার ৭০০ ও এয়ারটেলের সাড়ে ৫ হাজার।
এদিকে, একীভূত রবি-এয়ারটেলের মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াবে সব মোবাইল অপারেটরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। বর্তমানে এয়ারটেলের কাছে ২০ মেগাহার্টজ আর রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুটি প্রতিষ্ঠানের মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ। বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে।
Source