-বণিক বার্তা ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩২০ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাত্ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যপূরণে এ সংখ্যা যথেষ্ট নয়। গত সোমবার জাতিসংঘ (ইউএন) ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়। খবর টেলিকম পেপার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ৫৫ শতাংশ বাসাবাড়ি ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এ সংখ্যা ৫৬ শতাংশ অতিক্রম করবে। অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও মাত্র ৫৩ শতাংশকে সংশ্লিষ্ট সেবার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
কানেক্ট ২০২০ কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ এবং ন্যূনতম উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশ বাসাবাড়ি ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হবে। কিন্তু আইটিইউর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ৪৫ শতাংশ এবং ন্যূনতম উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ১১ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা থাকবে।
আইটিইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে বিশ্বের ৪৬ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের ব্যবস্থা থাকবে। গত বছর শেষে ৪৪ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের সুবিধা ছিল। অন্যদিকে ২০১০ সালে বিশ্বের মাত্র ৩০ শতাংশ বাসাবাড়িতে এ সেবা ব্যবহারের সুবিধা ছিল। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় ৮১ দশমিক ৩ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা আছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত ৪৮টি ন্যূনতম উন্নত দেশের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া গত বছরের ৭ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় চলতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহার প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও ২০১০-১৫ সালের মধ্যবর্তী সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বলা হচ্ছে, বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরই বসবাস উন্নয়নশীল বিশ্বে।
চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ব্রডব্যান্ড সাবসক্রিপশন ৩৫০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করবে। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ কোটির ঘরে। অবশ্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড সাবসক্রিপশন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সাবসক্রিপশনের বৃদ্ধি কমেছে। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সাবসক্রিপশনের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮০ কোটিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ওয়্যারলেস সেবার আওতায় এসেছে। অর্থাত্ ৩৫ কোটি মানুষ এখনো মোবাইল ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেবার বাইরে বসবাস করছে। অবশ্য গত বছরের ৪৫ কোটির তুলনায় এ সংখ্যা কমেছে অনেকটাই। এছাড়া বিশ্বের ৮৯ শতাংশ শহুরে মানুষ এখন তৃতীয় প্রজন্মের দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক পরিসেবা থ্রিজির আওতায় এসেছে। অন্যদিকে গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ এ পরিসেবার আওতায় এসেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৪০ কোটি মানুষেরই বসবাস গ্রামীণ অঞ্চলে।
আইটিইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ওয়্যারলেস সেবার মূল্য কমতির ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা ২০০৮ সালের ২৯ শতাংশের চেয়ে গত বছর শেষে মাথাপিছু আয়ের ১৪ শতাংশ কমেছে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড খাতে এটাকে বড় ধরনের মূল্যহ্রাস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর এ কারণে টেলিযোগাযোগ সেবা ২০-৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী হয়েছে।
আইটিইউর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স প্রতিবেদন ২০১৫-এ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কোরিয়া। এর পরেই আছে ডেনমার্ক এবং আইসল্যান্ড। এছাড়া শীর্ষ ৩০টি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপ এবং উচ্চআয়ের বেশকিছু দেশ। এ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, চীন, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ দেশগুলো আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স প্রতিবেদনে তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
আইটিইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ৪ নম্বরে আছে আফগানিস্তান।
স্মার্টফোনের মতো মোবাইল ডিভাইসের কারণে বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোয় ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। যদিও এ প্রবৃদ্ধি খুব একটা আশানরূপ নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোয় ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত।
Source