-বণিক বার্তা ডেস্ক
১৮৬৫ সালে যাত্রা হয়েছিল কাগজের ব্যবসা দিয়ে। তবে নামটা তখনো নকিয়া হয়নি। পরবর্তীতে ফিনল্যান্ডের নকিয়া শহরে ব্যবসা শুরু করায় সে অনুযায়ী নামকরণ হয়। বিদ্যুত্, টেলিফোন, বৈদ্যুতিক কেবল, রাবার বুট— কিসে জড়ায়নি প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটি। উনিশ শতকের রাবার বুট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি একসময় আবির্ভূত হয় সেলফোন খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে। প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য সে সময় ২৫ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ওঠে। সেলফোন দিয়ে একসময় বাজার মাত করা প্রতিষ্ঠানটির স্বর্ণযুগ আর নেই। তবে আজকাল তাদের নিয়ে আবার আলোচনা হচ্ছে ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যালকাটেল-লুসেন্টকে কেনার সিদ্ধান্তে। এ অধিগ্রহণের মাধ্যমে আবার প্রতিষ্ঠানটি কোনো খাতের নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছে বলেই আভাস দিচ্ছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
খবর নিউইয়র্ক টাইমস।
একটা সময় ছিল, যখন সেলফোনের জন্য গ্রাহকদের প্রথম পছন্দ ছিল নকিয়া। কিন্তু দ্রুত বর্ধমান খাতটির সঙ্গে শেষমেশ তাল মেলাতে পারেনি ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ফলস্বরূপ একসময়কার তারা সবচেয়ে লাভবান ব্যবসাটি মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নতুন করে খুঁজে পেতে যাচ্ছে। ডয়েচে টেলিকম ও চায়না মোবাইলের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এখন তারা মোবাইল নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ উত্পাদন করছে। এ প্রক্রিয়া তাদের ১ হাজার ৬৬০ কোটি ডলারে অ্যালকাটেল-লুসেন্ট অধিগ্রহণে গতি পাবে।
অ্যালকাটেল-লুসেন্ট অধিগ্রহণ খাতটিতে নকিয়ার আধিপত্য বাড়াবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাজিব সুরি। এ খাতে সবার উপরে থেকে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা তার প্রতিষ্ঠান অর্জন করছে বলেও মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি নকিয়ার শেয়ারহোল্ডাররা ফিনল্যান্ডের হেলসিনকিতে মিলিত হতে যাচ্ছেন। তাতেই অধিগ্রহণে চূড়ান্ত সম্মতি দেয়া হবে। এ বছরের শেষ নাগাদ অ্যালকাটেল-লুসেন্টের শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি মিলবে বলেও জানা গেছে। ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডাররা নকিয়ার এক-তৃতীয়াংশের মালিকানা পেতে যাচ্ছেন। যেখানে বাকি দুই-তৃতীয়াংশ থাকবে নকিয়ার শেয়ারহোল্ডারদের দখলে।
রাজিব সুরির মতে, অ্যালকাটেল-লুসেন্ট অধিগ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের মূল লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে। ১৭ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই ও ডিজিটাল ম্যাপিং সেবা বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যয় কমিয়ে মূল ব্যবসায় মনোযোগ বাড়াতে চাইছে। আর অ্যালকাটেল-লুসেন্টকে নিয়েই এ পথ এগোতে চাইছে রাজিব সুরির নেতৃত্বাধীন নকিয়া।
নকিয়া ও অ্যালকাটেল লুসেন্ট একই খাতের প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের বিশেষত্ব আলাদা। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে পারদর্শী নকিয়া অ্যালকাটেল-লুসেন্টের রাউটারসহ অন্যান্য ডিভাইস তৈরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুরো নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ নির্মাণ খাতে নিজেদের আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
‘নকিয়া ও অ্যালকাটেল-লুসেন্টের জন্য এটা টিকে থাকার যুদ্ধ’— বলেন স্টকহোমের টেলিযোগাযোগ বিষয়ে পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান নর্থস্ট্রিমের সহপ্রতিষ্ঠাতা বেঙ্গট নর্ডস্ট্রম। তাদের জন্য প্রবৃদ্ধির উত্স খুঁজে পাওয়াই এখন মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি। তবে পোড় খাওয়া নকিয়া তাদের সেলফোন ইউনিট বিক্রি করার সময়ই নিজেদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। আর অ্যালকাটেলকে দিয়ে তারা বাজার ও সক্ষমতা উভয়ই বাড়াতে যাচ্ছে। সেলফোনের পর এবার নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ খাতে আলোকিত হওয়ার অপেক্ষায় নকিয়া।
Source