খবরের শিরোনামঃ অনলাইন ব্যবসায় ধস

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৪

-শাহিদ বাপ্পি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ফেসবুকসহ অন্য মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে ই-কমার্স (ফেসবুক কমার্স) বেশ জমজমাট। পণ্যের বিজ্ঞাপন, ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যও ব্যবহার হয় এসব মাধ্যম। তবে বর্তমানে ফেসবুক বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে এ ব্যবসায়। দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকায় ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনলাইন ব্যবসা। এই সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহারে করে ব্যবহারকারীরা কেনাকেটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় তাদের আলাদা করে ই-কর্মাস সাইট ভিজিটর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিজিটর কমে গেছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটের ডেটা ব্যবহার কমেছে ৩০ শতাংশ। অবশ্য ফেসবুক বন্ধের দিন থেকেই বিকল্প পদ্ধতিতে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে অনেকেই। বিশেষ করে তরুণদের বিরাট অংশ বিকল্প পদ্ধতিতে এখনো সক্রিয় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটিতে। তারপরও দীর্ঘ সময় ধরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে তাদের মধ্যে। ১৮ নভেম্বর দেশের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকসহ ৯টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনার পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এসব অ্যাপস বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুকনির্ভর যোগাযোগ, ই-কমার্স (ফেসবুক কমার্স), কমতে থাকে ব্যান্ডউইডথের ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাজীব আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় ৯০ শতাংশ অনলাইন ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসা ফেসবুকনির্ভর। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের হাতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারের নিরাপত্তা ইস্যুটিকে সমর্থন করে রাজিব বলেন, দ্রুততম সময়ে এগুলো খুলে দিলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। তা না হলে ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। সেজন্য দ্রুত ফেসবুক খুলে দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে আনুমানিক ২ কোটি টাকার পণ্য সেবা লেনদেন হয়। এখন এই ব্যবসা কমপক্ষে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। শুধু ফেসবুকনির্ভর ব্যবসাও কমেছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ফেসবুকের ওপর অতি নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের ৯০ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসার ক্ষেত্রেও এটি প্রভাব ফেলেছে। জানা গেছে, ফেসবুক বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনে ওয়েবসাইটে ভিজিটর কমেছে ৫০ শতাংশ, আর অর্ডার কমেছে ৩০ শতাংশ। ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ভেতরে তো বটেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা ফেসবুক পেজ থেকে পছন্দ করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে থাকেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের গ্রাহকদের কাছে পোশাকের নকশাও পাঠান। কিন্তু এসব মাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর আর কোনো কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায় মন্দা দেখা দিচ্ছে। ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার আমাদের সময়কে বলেন, এটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। কোনো অ্যাপস বন্ধ করা নয়; বরং সক্ষমতা বৃদ্ধিই সমাধান। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম জনবল তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আমরা সামাল দিতে পারব না। বিটিআরসি বলছে, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে। আবার নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই এগুলো খুলে দেওয়া হবে।

Source