-এম. মিজানুর রহমান সোহেল
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দেশে হঠাৎ আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। গত ৩০ নভেম্বর বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল রেট ১ দশমিক ৫ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ২ সেন্ট নির্ধারণ করা হয় এবং ঠিক তার পরদিন ১ ডিসেম্বর থেকে এ রেট কার্যকর করা শুরু হয়। এ সিদ্ধান্তের পর মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে বিটিসিএলের কলের পরিমাণ দৈনিক গড়ে ১ কোটি মিনিট কমে গেছে। এর ফলে সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশংকা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একদিনের ব্যবধানে কল রেটের এত বড় তারতম্যে হতবাক আন্তর্জাতিক টেলিকম ক্যারিয়ারগুলোও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিনেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান এ সিদ্ধান্তের প্রতিকূলে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। অন্যদিকে যারা আদালতে না গিয়ে ঝামেলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা নিজ দেশের দূতাবাসে এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে ন্যূনতম ৭ থেকে ১৫ দিনের নোটিশে কলরেট বৃদ্ধি করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে বিটিসিএল মাত্র একদিনের নোটিশে দাম বৃদ্ধি করল। আর এতে চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন বিটিসিএলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেলিকম ক্যারিয়ারগুলো। আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের জন্য বিটিসিএলের নিবন্ধন ফি এবং আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে এখন চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন কলরেট কার্যকরের দুই দিনের ব্যবধানে বিটিসিএলের কলের পরিমাণ ১ কোটি মিনিট কমে গেছে। এর ফলে শুধু বিদেশী প্রাইভেট ক্যারিয়ারগুলো নয়, বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন বাংলাদেশ সরকারও। এ ছাড়াও প্রতি মিনিট ২ সেন্ট রেট আন্তর্জাতিক টেলিকম বাজারের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া কলরেট বৃদ্ধির পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই আমাকে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু আমাকে অন্ধকারে রেখে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি সঠিক হয়নি বলেই আমার মনে হয়। তাছাড়া বিটিসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিষ্ঠানটির এমডি আমাকে না জানিয়ে কীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেন তা আমার বোধগম্য নয়। যে সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না। আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। এদিকে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফখরুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কল রেট বাড়ানো হয়েছে। বিটিসিএল শুধু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসা কল সংখ্যায় কি ধরনের তারতম্য হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে কোম্পানিগুলোর ফোরাম আইওএফের কল রেটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য বিটিসিএল কল টার্মিনেশন রেট দুই সেন্ট করা হয়েছে। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনায় কল রেট আবারও পরিবর্তন করা হবে।
Source