-বণিক বার্তা ডেস্ক
দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অন্য সব খাতের মতোই এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশটির টেলিকম খাতেও। সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিওএআই) হিসাবে, চেন্নাইয়ের বন্যায় খাতটির ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কারখানা বন্ধ রেখেছে নকিয়া ও হুয়াউইর মতো টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও। খবর ইকোনমিক টাইমস।
সিওএআইয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত নেটওয়ার্ক সাইটগুলোকে পুনরুদ্ধারে ১০০ কোটি রুপি এবং গত সপ্তাহজুড়ে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব লোকসান দাঁড়িয়েছে ২০০ কোটি রুপি।
সিওএআইয়ের মহাপরিচালক রাজন ম্যাথিউস বলেন, প্রবল বর্ষণে চেন্নাইয়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ১০০ বছরের ইতিহাসে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি চেন্নাইবাসী। প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২৭০ জন ছাড়িয়েছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে তাত্ক্ষণিক ত্রাণসামগ্রী এবং উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে ভারতের জাতীয় দুর্যোগ রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ), যা এরই মধ্যে ১০ হাজার বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করেছে।
তিনি আরো বলেন, বন্যার কারণে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ভেন্ডর যেমন: নকিয়া ও হুয়াউইর মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চেন্নাইয়ের পাশেই এ দুই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কারখানা রয়েছে, যা সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ নির্মাতা নকিয়া জানায়, প্রবল বর্ষণ এবং সৃষ্ট বন্যার কারণে কয়েক দিন ধরে অস্থায়ীভাবে চেন্নাই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারখানা থেকে দ্রুতগতির থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্কসংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাইরের প্রায় ২৬টি বাজারে রফতানি করা হয়। কার্যত উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নকিয়ার চেন্নাই কারখানায় কর্মী সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন। বর্তমানে নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টরা।
প্রযুক্তি শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চেন্নাইয়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নকিয়ার বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা। বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এখন ফিনল্যান্ড এবং চীনের কারখানার ওপর নির্ভর করছে প্রতিষ্ঠানটি।
নকিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, এরই মধ্যে অন্তর্মুখী এবং বহির্গামী সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চেন্নাইয়ের পরিবর্তে এখন বেঙ্গালুরু থেকে সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
চীনভিত্তিক হুয়াউই জানায়, কর্মীদের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ, নেটওয়ার্ক এবং সেবা সরবরাহের নিরাপত্তায় জরুরি সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রাহক পরিসেবা অক্ষুণ্ন রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চেন্নাই কারখানা থেকে অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সিস্টেমস উৎপাদন করে এ প্রতিষ্ঠান, যা মূলত চীনের পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি করা হয়। বর্তমানে এর উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলা হলেও উৎপাদনে ফিরতে আরো কত দিন লাগতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেলিকম অবকাঠামো, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে টেলিকম অপারেটর কোম্পানি ভারতী এয়ারটেল, আইডিয়া সেলুলার এবং ভোডাফোনের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা সরবরাহের ওপর। চেন্নাই ও এর আশপাশের এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যদিও এয়ারটেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা মোবাইল পরিষেবা চালু রাখতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে।
Source