-বণিক বার্তা ডেস্ক
প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চলমান জাতিসংঘের সম্মেলনে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে নিজেদের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। অনেকে নতুন উদ্যোগের ঘোষণাও দিয়েছেন। দ্য অবজারভারের গত রোববারের সংস্করণে ‘সৃজনশীলতা আমাদের উষ্ণ পৃথিবী রক্ষা করবে— কিন্তু বিনিয়োগ কোথায়?’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়ক নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে সরকারি ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয় প্রতিবেদনটিতে। এক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান নিয়েও চিন্তার অবকাশ রয়েছে। সৃজনশীল প্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে পরিবেশবান্ধব করতে এ দুটি খাতের উদ্যোগী হওয়ার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। আর তাদের উদ্যোগ অবস্থার পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর টেলিকম এশিয়া।
টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুতের অন্যতম বড় গ্রাহক। অনেক দেশে এ খাতটিতেই বিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে মোবাইল বেজ স্টেশন স্থাপনে ডিজেলের ব্যবহার করা হয়। ডাটা সেন্টারগুলোও পরিবেশ দূষণে বড় অবদান রাখছে। জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে অবকাঠামো নির্মাণে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। এ অবকাঠামোগুলো ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থাও বিদ্যুত্ ব্যবহারের অন্যতম বড় মাধ্যম।
অন্য অনেক খাতেও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। ডাটা সংযোগ ও ডিজিটাল সেবার চাহিদা বাড়ায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্ব বাড়ছে। ফলে বাড়ছে এ-সংক্রান্ত অবকাঠামো। ফিক্সড ও মোবাইল নেটওয়ার্কসে ২০১৫ সালে লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি পেটাবাইট তথ্য। ২০২০ সালের মধ্যে এ পরিমাণ ১০৪ কোটি পেটাবাইটে ঠেকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাত্ এ পরিমাণ তথ্য লেনদেনে প্রয়োজন হবে আরো বেজ স্টেশন ও ডাটা সেন্টার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আগামী পাঁচ বছরের তথ্য লেনদেন সামাল দিতে ১৭টি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। কিন্তু তথ্য লেনদেনের এ পরিমাণ বাড়লেও জ্বালানি সাশ্রয়ে তেমন বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সময়ের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অবশ্যম্ভাবীভাবে বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েই ভাবছেন পরিবেশবিদরা। তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যে বর্তমানে ব্যবহূত জ্বালানির বিকল্প রূপ নিয়ে ভাবছে না, তা নয়। এভাবে না ভাবলে তাদের ব্যয় সময়ের সঙ্গে বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সৌরশক্তির মতো ব্যবস্থা এক্ষেত্রে উত্তম বিকল্প হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না।
২০১২ সালে ভারতে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেজ স্টেশন ছিল প্রায় ৪ লাখ। দেশটির সরকার সে সময় ২০১৫ সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের অর্ধেক বেজ স্টেশন নবায়নযোগ্য জ্বালানির অধীনে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ডাটা সেন্টারে সৌরশক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ওভামের প্রধান বিশ্লেষক রয় ইলসলে গত সেপ্টেম্বরে এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পৃথক সৌর প্রকল্প তৈরি এখনই সম্ভব নয়।’ সৌর জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবকাঠামো ব্যয় তুলনামূলক বেশি পড়ায় সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা তৈরি সম্ভব নয়।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট অব থিংসে মনোনিবেশ বাড়াচ্ছে। এ খাতকেই তারা অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু এ সেবা সরবরাহে প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালানি ব্যয় ও কার্বন নিঃসরণের মতো বিষয়গুলো মাথায় রাখছে কিনা, তাই এখন বড় প্রশ্ন।
ইন্টেলের ইনোভেটিভ আইওটি সলিউশনের পরিচালক সন্ধি ভাইড এ বছরের শুরুতে বলেন, ‘আইওটি ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ছে। এগুলো চালাতে আগামীতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। আসন্ন আইওটি ডিভাইসগুলো শুধু ব্যাটারির ওপর নির্ভর করে চালানো সম্ভব নয়।’
যে খাতগুলোকে বিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় তার মধ্যে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। তবে এখানে বিদ্যুতের ব্যবহার অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে অধিক হারে বাড়বে। এক্ষেত্রে জ্বালানির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে পরিবেশ দূষণের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কার্বন নিঃসরণ কমাতে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় এড়ানোর উপায় নেই। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের করণীয়ও নিতান্ত কম নয়।
অরেঞ্জ এ সপ্তাহে পুরনো ই-মেইল মুছে দেয়ার প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ জ্বালানির ব্যবহার কমাতে কাজ দেবে। তবে এ ধরনের উদ্যোগকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। অ্যাপল, ফেসবুকের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পথে হাঁটছে। এ ধরনের উদ্যোগ খাতের সব ক’টি প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করছে কিনা বা এতে আদৌ কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের মনোভাবে পরিবর্তন আনবে কিনা, তাই এখন বড় প্রশ্ন।
Source