খবরের শিরোনামঃ ফেসবুকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৭

-স্টাফ রিপোর্টার :
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশে ফেসবুকের এডমিন বসানো, ফিল্টার করার সুযোগ ও তাদের সঙ্গে চুক্তি করা। জবাবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়গুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কত দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাননি তারা। গতকাল সরকারের সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এদিকে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিগগিরই ফেসবুক খুলে দেয়া হবে। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দুই কর্মকর্তা দিপালী লিবার হেন (দক্ষিণ এশিয়ার পলিসি ম্যানেজার) ও বিক্রম লাংয়ের (রাজনৈতিক ও আইন উপদেষ্টা) সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ ছাড়া বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হকসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল ফেসবুক। বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তারা কথা বলছেন- কবে খুলবেন। তা নিয়েই এ আলোচনা। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সিকিউরিটির (নিরাপত্তার) ক্ষেত্রে কি প্রয়োজন তা আমরা জানাতে পেরেছি। ফেসবুক কর্মকর্তারা আমাদের কথা শুনেছেন। তারা কতটুকু সহযোগিতা করতে পারবেন, তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত শিগগিরই আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছে উপস্থাপন করবো। কবে নাগাদ ফেসবুক খুলে দেয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু এটুকু বলবো- ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবো। বিকল্প পথে ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুব সমাজ অনেক ট্যালেন্ট। এ যুব সমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনেক আশা-ভরসা। যারা বিকল্প পথে ফেসবুক খুলছেন সেটি ভিন্ন বিষয়। ফেসবুকের কাছে আমাদের কি চাওয়ার ছিল, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক অনেকে অপব্যবহার করছেন, অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। সে সব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তারা (ফেসবুক কর্তৃপক্ষ) আমাদের চাওয়া মেটাতে পারবেন কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। তারা সহযোগিতা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর বিকালে ফেসবুকের দুই কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী অফিসে আরও একটি বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকি ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় উসকানির বিষয় ফেসবুক কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ইউরোপে বিকিনি পরা কোন নারীর ছবি সেখানে সাধারণ ঘটনা। অথচ বাংলাদেশে কোন নারী বিকিনি পরা ছবি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। আবার ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃত করে কোন তারুণীর ছবি ফেসবুকে দেয়ার পর গ্রামের ওই তরুণীকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে হচ্ছে। এ ধরনের কয়েকটি পোস্ট বৈঠকে উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, ফেসবুকের ওই দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এতদিন তারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু কিছু জানলেও খুব একটা বুঝতেন না। ফলে তারা গুরুত্ব দেননি। এখন অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন বলে জানিয়েছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠিতে সাড়া দিয়ে ফেসবুক কর্মকর্তারা এ বৈঠকে অংশ নেন। নারী ও শিশুর প্রতি অবমাননাকর বিষয়সহ সাইবার ক্রাইম রোধ এবং আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ৩০ নভেম্বর ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলে চিঠি পাঠান তারানা হালিম। তার একদিন পর চিঠির জবাব দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যাতে আলোচনায় বসার সময় নির্ধারণ করা হয়।

Source