-ফারুক হোসাইন :
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। বিধিমালা অনুযায়ি বিটিসিএলের যে কোনো সার্ভিস কিংবা ট্যারিফ ঘোষণা, পরিবর্তন এবং বাস্তবায়নের জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এসব বিধি কিংবা বাধ্যবাধকতাকে পাত্তাই দিচ্ছে না বিটিসিএল। খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়েই একের পর এক ট্যারিফ, সার্ভিস ও মূল্য পরিবর্তনের ঘোষণা করছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। গত সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইন্টারনেটের ট্যারিফ কমানোর পর এবার একইভাবে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে বিটিসিএল। যদিও আগের বারের মতো এবারও বিটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকার বলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। তার সভাপতিত্বে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলরেট বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে টেলিকম মন্ত্রণালয় বলছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হলেও বিটিসিএলের এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় জানে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বিটিসিএলের কলরেট বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিটিসিএলের কলরেট বাড়ানোর কোনো ফাইল আমার কাছে আসেনি। সচিব তো এখন বিদেশে আছেন, আমাকে না জানিয়ে বিটিসিএল কার অনুমতি নিয়ে কলরেট বাড়ালো? এদিকে মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে গোপনে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বাড়ানোর কারণে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিটিসিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারগুলো। তারাই বিভিন্ন দেশ থেকে কল সংগ্রহ করে বিটিসিএলের মাধ্যমে দেশে পাঠাত। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিটিসিএলের যে কোনো ট্যারিফ ঘোষণা, মূল্য নির্ধারণ কিংবা পরিবর্তনের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ি কলরেট পরিবর্তন হলে তা ৭ থেকে ১৫ দিনের নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বিটিসিএল’র কোনোটিকেই প্রাধান্য না দিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই মাত্র এক দিনের নোটিশে আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে তা কার্যকর করেছে। আগের দেড় সেন্টের পরিবর্তে ১ ডিসেম্বর থেকে বিটিসিএল দুই সেন্টে বিদেশ থেকে দেশে কল আনতে শুরু করে। যার প্রভাব ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলে পড়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে বিটিসিএলের আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল ১ কোটি মিনিট কমে গেছে। এতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলোই নয়, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারও। জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ সভায় কলরেট বাড়ানো হয়। কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করেই তা পরদিনই কার্যকর করা হয়। একদিনের ব্যবধানে কলরেটের এত তারতম্যে হতবাক হন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলো বিটিসিএলের এই সিদ্ধান্তে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও গত ২৪ নভেম্বর থেকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরগুলো দুই সেন্টে আন্তর্জাতিক কল আনছে। তাদের কলরেট বৃদ্ধির পর দেড় সেন্ট নাকি দুই সেন্টে কল আনবে সে বিষয়ে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিটিসিএল। তবে মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন দেয়ার আগেই বিটিসিএল তা কার্যকর করে দেয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক কলের সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ১ দশমিক ৭ সেন্ট বেঁধে দেয়ার একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি অনুমোদন ছাড়াই নতুন ট্যারিফ ঘোষণা করে বিটিসিএল। শুধু ঘোষণাই নয়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সেটি বিটিসিএলের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়। ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কস্ট কম্পোনেন্ট মূল্য (সংশ্লিষ্ট সকল ব্যয়) কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং আলোচনার পর্যায়ে থাকার সময়ে বিটিসিএল হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যখন কস্ট বেইজ নির্ধারণ নিয়ে বিটিআরসি এনটিটিএন অপারেটরদের নিয়ে কাজ শুরু করে ঠিক সে সময় নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিটিআরসি অনুমোদন না নিয়ে নতুন ট্যারিফ ঘোষণা করেছে বিটিসিএল এ প্রসঙ্গে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কলরেট বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব পদাধিকার বলে বিটিসিএলের বোর্ডের প্রধান। একইভাবে ট্যারিফ মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে তিনি জানান। -
Source