খবরের শিরোনামঃ চায়না মোবাইলের পথে রিলায়েন্স জিও!

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৭

-বণিক বার্তা ডেস্ক
২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ফোরজি বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে টেলিকম প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স জিও। এটি ভারতীয় ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা খাতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বলা হচ্ছে, ফোরজি খাতে সাফল্য পেতে চায়না মোবাইলকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। নেটওয়ার্ক স্থাপন ও সেবা সরবরাহের মতো বেশকিছু বিষয়ে রিলায়েন্স জিও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানটির পথেই হাঁটছে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের উদ্ধৃতি থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। খবর বিজনেস টুডে। আম্বানির কাছের এক নির্বাহী বলেন, গ্রাহকদের জন্য আমরা আরো একটি রিলায়েন্স প্রকল্প নিয়ে আসছি। ডাটা এখন রিলায়েন্সের নতুন পরিচালক হিসেবে কাজ করবে। আর নতুন প্রকল্পটি চায়না মোবাইলের দেখানো পথ অনুসরণ করবে। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ চায়না মোবাইলের গ্রাহকভিত্তি দাঁড়ায় ৮০ কোটি ৭০ লাখে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফোরজি গ্রাহকই ছিল ৯ কোটি। তাদের ভয়েজ খাতে রাজস্ব কমে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু ডাটাসেবা থেকে রাজস্ব বেড়েছে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ। মোবাইল ডাটা ট্রাফিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ। রিলায়েন্স জিও ভারতে একই ধরনের প্রবৃদ্ধির আশা করছে। আর তাদের প্রাধান্যও চায়না মোবাইলের মতো হবে। রিলায়েন্সের নির্বাহী বলেন, ‘মানুষের কাছে সেবা নিয়ে পৌঁছাতে আমাদের রাস্তা, গাড়ি ও গন্তব্যের প্রয়োজন। টেলিযোগাযোগ খাতে রাস্তা মানে অবকাঠামো, গাড়ি মানে ডিভাইস আর গন্তব্য হচ্ছে সাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের রয়েছে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি আর অবকাঠামো।’ কেপিএমজি ভারতের অংশীদার ও টেলিকম সেবার প্রধান রোমাল শেট্টি বলেন, ‘চায়না মোবাইল ফোরজি সেবা বাস্তবায়নে নতুন প্রযুক্তির বদলে বিদ্যমান থ্রিজিকেই ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে। এর অন্যতম কারণ ছিল, তারা টাইম ডোমেন ডুপ্লেক্সিং স্কিমের মাধ্যমে থ্রিজি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেছিল। আর তাদের এলটিই বাস্তবায়ন ছিল টিডি-এলটিইভিত্তিক। এদিকে চায়না মোবাইলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীদের (চায়না ইউনিকম ও চায়না টেলিকম) থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ফ্রিকুয়েন্স ডোমেন ডুপ্লেক্সিংভিত্তিক হওয়ায় তাদের টিডি-এলটিই ব্যবস্থা কার্যকরে বেশ বেগ পেতে হয়। এ সুবিধা চায়না মোবাইলকে অন্যদের তুলনায় দ্রুত ও বেশি পরিসরে ফোরজি সেবা কার্যকরে সহায়তা করেছে।’ ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভানের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস প্র্যাকটিস বিভাগের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট রাহুল আগরওয়ালের মতে, টিডি-এলটিই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত ও উন্নত সেবা সরবরাহ করার কারণেই আজ এ অবস্থানে উঠে এসেছে চায়না মোবাইল। টিডি-এসসিডিএমএ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চায়না মোবাইলের সেবার যে গতি ছিল, টিডি-এলটিইতে গতি ছিল অনেক বেশি। আর টিডি-এসসিডিএমএ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করাও তুলনামূলক জটিল। চীনা প্রতিষ্ঠানটি টিডি-এলটিই খাতে ভালো করেছে এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, রিলায়েন্স জিও ২০১০ সালেই টিডি-এলটিই স্পেকট্রাম কিনেছে। আর চায়না মোবাইলকে অনুসরণ করতে পেরে তারা বেশ আনন্দিত। ২০১৪ সালে ভয়েজকেন্দ্রিক থেকে ডাটাকেন্দ্রিক ব্যবসায় মনোনিবেশ বাড়ায় চায়না মোবাইল। তাদের হ্যান্ডসেটপ্রতি গড় ডাটা ট্রাফিক তখন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮০ মেগাবাইটে। এ সেবার জন্য তারা ৭ লাখ ২০ হাজার ফোরজি বেজ স্টেশন স্থাপন করে, যা ১০০ কোটিরও বেশি মানুষকে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসে। কিন্তু সেবার শুরুতে রিলায়েন্স জিও একই সংখ্যক গ্রাহকের জন্য স্থাপন করবে ৭৫ হাজার টাওয়ার। তবে আগামীতে সেবার মানোন্নয়নে টাওয়ার বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বিশ্লেষকদের মতে, কৌশলগতভাবে রিলায়েন্স জিও চায়না মোবাইলকে অনুসরণ করছে। তবে ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সেবা বাস্তবায়নের ওপর। উল্লেখ্য, টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহের সঙ্গে তারা মোবাইল ডিভাইস সরবরাহ বাজারেও প্রবেশ করবে। এজন্য তারা অ্যাপল, স্যামসাং ও মাইক্রোম্যাক্সের মতো ২৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

Source