খবরের শিরোনামঃ বিটিআরসির এফডিআর বন্ধক রেখে ঋণ নিল যমুনা এগ্রো

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৭

-শাহিদ বাপ্পি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ৭০ কোটি টাকার এফডিআর বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন যমুনা এগ্রো লিমিটেডের অন্যতম মালিক ও অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য শওকত চৌধুরী। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (বিসিবি) বংশাল শাখায় বিটিআরসির ওই এফডিআর স্থানান্তর করা হয় একই শাখায় যমুনা এগ্রো নামে। ওই এফডিআর বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া হয়েছে যমুনা এগ্রোকে। ইতোমধ্যে ওই ঋণ খেলাপি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, বিটিআরসির এফডিআরের মেয়াদ পূর্তি হওয়ায় মুনাফাসহ তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যমুনা এগ্রোর হিসাব থেকে বিটিআরসির টাকা তুলে আনা হলেও যমুনা এগ্রোর কাছ থেকে কোনো বাড়তি জামানত নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে বর্তমানে কোনো জামানত নেই। যমুনা এগ্রোর মালিক শওকত চৌধুরীর সঙ্গে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। দ্বিতীয় দফায় ফোনে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায়, শাখার কর্মকর্তারা ব্যাংকের সফটঅয়্যার কারসাজি করে বেআইনিভাবে ওই এফডিআর প্রথমে আলোচ্য গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরে ওই এফডিআর গ্রাহকের এলসি মার্জিন হিসেবে দেখানো হয়। ওই মার্জিনের বিপরীতে এলসি খোলা হয়েছে। এক গ্রাহকের টাকা অন্য গ্রাহকের হিসাবে দেখানোকে ব্যাংকিং ভাষায় ‘অমার্জনীয়’ অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে। ঋণপত্রের কাগজে একে দেখানো হয়েছে শতভাগ মার্জিনের। কিন্তু বাস্তবে বিটিআরসির টাকা স্থানান্তর করে দেখানোর পরও শতভাগ মার্জিনের শর্ত পূরণ হয়নি। সূত্র জানায়, ওই শাখায় থাকা গ্রাহকের নামে আরও ৩০ কোটি টাকার এফডিআর ছিল, যা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রচলিত নিয়মে ওই ঋণ শোধ না হওয়ার আগে বা ঋণের বিপরীতে অন্য কোনো জামানত না দেওয়া পর্যন্ত আগের জামানত হিসেবে থাকা ৩০ কোটি টাকার এফডিআর কোনোক্রমেই তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যÑ ওই ঋণ শোধ না হওয়ার পরও বেআইনিভাবে ওই এফডিআর গ্রাহককে তুলে নিতে দেওয়া হয়েছে। ওই শাখার মাধ্যমে গ্রাহকের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ৩১ কোটি টাকার নগদ সহায়তার অর্থ জমা ছিল যমুনা এগ্রোর হিসাবে। নিয়ম অনুযায়ী, ওই অর্থ বকেয়া ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করার পর বাড়তি কোনো অর্থ থাকলে তা তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে। কিন্তু ওই অর্থের সঙ্গে ঋণের সমন্বয় না করেই নগদ সহায়তার ৩১ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘অকল্পনীয়’ হিসেবে মনে করে। কমার্স ব্যাংকের ওই শাখা থেকে এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। প্রধান কার্যালয়ের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই শাখা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে এসব ঋণ দিয়েছে। কমার্স ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিটিআরসির সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। তারা যে এফডিআর রেখেছিল সেগুলো মেয়াদ পূর্তির পর মুনাফাসহ ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে যমুনা এগ্রোর নামে সমপরিমাণ ফোর্সলোন সৃষ্টি করে এলসির দেনা শোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের সফটঅয়্যার ভুল সংকেত দেওয়ায় ওই টাকা যমুনা এগ্রোর হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে প্রথমে ঘটনাটি কমার্স ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে ধরা পড়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক একই ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর সূত্র ধরে আরও কয়েকটি ব্যাংকের সম্পৃক্ততা পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে বিশদ একটি তদন্ত করা হয়। ওই তদন্তে আরও তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার তথ্য উদঘাটন করা হয়। এ ঘটনাটি তদন্তের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়। শত চাপ উপেক্ষা করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত সম্পন্ন করেছে। সূত্র জানায়, সব মিলে কমার্স ব্যাংকের ওই শাখায় বর্তমানে যমুনা এগ্রোর দায়ের পরিমাণ ১০২ কোটি টাকা।

Source