-ইফতেখার আহমেদ টিপু
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে। ১৬৭ দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান এখন ১৪৪তম। এক বছর আগে এ অবস্থান ছিল ১৪৫তম এবং গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ চার ধাপ এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের এ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া ঘটনা। পাঁচ বছরে চার ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও নিঃসন্দেহে সমীহ করার মতো। তবে এতে আত্মপ্রসাদের কোনো সুযোগ নেই। কারণ জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের অন্যতম।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন সূচকে ক্রমান্বয়ে অগ্রগতি লাভ করলেও ১৬৭টি দেশের মধ্যে ১৪৪তম স্থান কোনোভাবেই সুখকর নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকল্প বুকে ধারণ করলেও বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে কম ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানও এ গোত্রের মধ্যে পড়ে।
আইটিইউয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ৩২০ কোটি মানুষ এখন অনলাইনের আওতায় চলে এসেছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। দুনিয়াজুড়ে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৭১০ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাত্ বিশ্বের ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে।
২০১৫ সালে এসে বিশ্বের সব দেশই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগিয়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোই বেশি এগিয়ে। এ অঞ্চলের দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, জাপানের মতো ছয়টি দেশ শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। স্মর্তব্য, সূচকের অন্তর্ভুক্ত ১৬৭টি দেশের মধ্যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে পড়া দেশ হলেও সে অবস্থান থেকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক ঘটনা। তবে অগ্রসর দেশগুলোর পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে স্পুটনিক গতিতে এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
তবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পারস্পরিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা থেকে শুরু করে ব্যাংকিংখাতে আমূল পরিবর্তন এনেছে ডিজিটাল পদ্ধতি। নিমিষেই তথ্য জানতে বা জানাতে পারছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়াও হয়েছে সহজ। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসার ঘটায় এবং হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে যাওয়ায় জনগণের মধ্যেও ডিজিটাল সেবা পাওয়ার চাহিদা বেড়ে গেছে। অনলাইনের মাধ্যমে যে কোনো পণ্য কেনাকাটার সুযোগ তৈরি হয়েছে ঘরে বসেই। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার মতো জাতীয় পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোনে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারনেটে ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছে। অনলাইনে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে পাসপোর্টের ফরম গ্রহণ ও জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সরকারের সব সেবা সংস্থার ফরম নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট। সেখান থেকে মুহূর্তেই সংগ্রহ করা যাচ্ছে যে কোনো ফরম। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে জনগণের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা এখন নেই। একইভাবে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবাও।
দেশের ব্যাংকিংসেবার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হওয়ায়। বিপুল হারে এটিএম বুথ চালু হওয়ায় জনগণ সপ্তাহে যে কোনো দিন যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে। বাংলাদেশে এখন অনলাইন পেশাজীবীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তির অনুকূল পরিবেশ ও বাংলাদেশ সরকারের নানাবিধ সুযোগের কারণে এটি করা সম্ভব হয়েছে। এসব অনলাইন পেশাজীবী করমুক্তভাবে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন, যা দেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই অনুকূল পরিবেশ অব্যাহত থাকলে এগিয়ে যাবে দেশ।
Source