খবরের শিরোনামঃ ফোন করলেই কৃষি তথ্য

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৮

-আশরাফুল ইসলাম
বছরজুড়েই মরিচ, আলু, টমেটো, পটোলসহ নানা সবজি চাষ করেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের কৃষক চান মিয়া। চাষাবাদ নিয়ে যেকোনো সমস্যায় পড়লেই এত দিন তিনি পরামর্শ নিতেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের। এখন ফোন দেন কলসেন্টারে। এই কলসেন্টার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই)। এখানে ১৬১২৩ নম্বরে ফোন দিলেই পাওয়া যায় কৃষি তথ্য ও নানা পরামর্শ। কেমন এই কলসেন্টার? জানতে চাওয়া হলে চান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার শিমগাছের পাতা জ্বলে যাচ্ছিল। কলসেন্টারে ফোন করার পর সেখান থেকে একটা কীটনাশক ব্যবহার করতে কয়। সেটা দিয়া অনেক উপকার পাইছি।’ শুধু নিজেই সেবা নেন না চান মিয়া, তাঁর মোবাইল ফোন থেকে কলসেন্টারে ফোন করে এলাকার আরও ১২ জন কৃষকও এখন কৃষি তথ্যসেবা নিচ্ছেন এবং চাষাবাদ করছেন। মোবাইলের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি তথ্য দেওয়ার এই সেবা চালু হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। শুরুটা করেছিল মুঠোফোন অপারেটর বাংলালিংক। এখন এ সেবা দিচ্ছে কৃষকদের নিয়ে সরাসরি কাজ করা সরকারি সংস্থা ডিএই। এগিয়ে এসেছে অন্যান্য মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ও রবিও। আরও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও এখন এই সেবা দিচ্ছে। ডিএইর কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) মাধ্যমে মুঠোফোনে তথ্যসেবা দেওয়া শুরু হয় ২০১৪ সালের জুনে। প্রথমে এ কলসেন্টারে বিনা মূল্যে ফোন করা গেলেও এখন সেবা নিতে কৃষকদের প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা খরচ করতে হয়। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এখান থেকে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ-সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান দেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। সরকারি এ কলসেন্টারটি খামারবাড়িতে ডিএই কার্যালয়ে। ‘বাংলালিংক কৃষি জিজ্ঞাসা’-এর ৭৬৭৬ হেল্পলাইনের মাধ্যমেও কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হচ্ছে। মুঠোফোন অপারেটর বাংলালিংকের উদ্যোগে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে। ৪০ হাজার প্রশ্নের উত্তরসংবলিত একটি তথ্যভান্ডার আছে তাদের কাছে। মাসে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক এখান থেকে সেবা পাচ্ছেন। কৃষকদের জন্য ২০১১ সালে আরেকটি সেবা চালু করে বাংলালিংক। ২৪৭৪ নম্বরে ফোন করে কৃষকেরা পণ্যের সঠিক বাজারমূল্য, কোথায় বিক্রি করবেন ও কোথা থেকে কিনবেন, তা জানতে পারেন। এখান থেকে দেশের বড় বড় বাজারে পণ্যের পাইকারি দামও জানতে পারেন কৃষক। গ্রামীণফোনেরও কৃষকদের জন্য একটি সেবা চালু আছে। প্রতিষ্ঠানটি ২৭৬৭৬ কলসেন্টারের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকদের মুঠোফোন ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমে সহায়তা করছে তারা। আরেক অপারেটর রবি ‘এমফার্মার’ নামে একটি খুদে বার্তাভিত্তিক কৃষিসেবা চালু করেছে। কলসেন্টারভিত্তিক ‘কৃষিবার্তা’ নামের আরেকটি সেবাও আছে অপারেটরটির। এ দুটি সেবার মাধ্যমে কৃষি তথ্যের পাশাপাশি আবহাওয়ার পূর্বাভাসও জানতে পারেন কৃষকেরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (বিআইআইডি) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ২০০৮ সাল থেকে ‘ই-কৃষক’ নামে মুঠোফোন ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কৃষিসেবা দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে কৃষিবিষয়ক হেল্পলাইন, কৃষিপণ্যের অনলাইন বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা ও কৃষিপণ্যের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। এমনকি কী করলে কৃষকদের মুনাফা বেশি হবে, সে বিষয়েও সেবা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এসব সেবা মিলবে ১৬২৫০ নম্বরে ফোন করলে। গ্রামীণ-ইন্টেল সোশ্যাল বিজনেস (জিআইএসবি) নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে কৃষকদের মুঠোফোনে সেবা দিচ্ছে। তারা ‘মৃত্তিকা’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এই সফটওয়্যারের উল্লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে সারের অপচয় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব, বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

Source