খবরের শিরোনামঃ দেশজ উৎপাদনে মুঠোফোন অর্থনীতির অবদান বাড়ছে

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১২-০৯

-আশরাফুল ইসলাম
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্রমেই বাড়ছে মুঠোফোনভিত্তিক অর্থনীতির অবদান। মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ (গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন) বলছে, ২০১৪ সালে দেশের মোট জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশের জোগান এসেছে মুঠোফোনভিত্তিক বিভিন্ন সেবা থেকে। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে মুঠোফোন অর্থনীতির অবদান বেড়ে হবে কমপক্ষে ৬ শতাংশ। ‘এশিয়ায় ডিজিটাল সমাজ নির্মাণ’ শীর্ষক জিএসএমএর এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। জিএসএমএর এ গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার জিডিপিতে মুঠোফোন অর্থনীতির অবদান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার ও বাজার বৃদ্ধিকে এসব দেশের জিডিপিতে মুঠোফোন অর্থনীতির জোগান বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে এ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে হারে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালে দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষের হাতে স্মার্টফোন থাকবে। স্মার্টফোনের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে আসাকে বাংলাদেশে এর দ্রুত ব্যবহার বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জিএসএমএর গবেষণায়। স্মার্টফোনের দাম কমার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০০৮ সালে একটি স্মার্টফোনের গড় মূল্য ছিল ৩৫০ ডলার, ২০১৪ সালে তা কমে ২০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আগামী দু-তিন বছরে স্মার্টফোনের গড় দাম ১০০ ডলারের নিচে চলে আসবে বলে মনে করছে জিএসএমএ। দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার যে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেটা মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে। বিএমপিআইএ বলছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বৈধভাবে প্রায় ৬০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। ২০১৪ সালে স্মার্টফোনের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০ লাখ। .মাত্র চার বছর আগে ২০১১ সালে স্মার্টফোন বিক্রি শুরু হয়। এর আগে দেশের মোবাইল ফোনের বাজার ছিল মূলত সাধারণ ফিচার ফোনের দখলে। ২০১২ সালে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন লাখ। ২০১৩ সালে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখে। ২০১২ থেকে ২০১৫—এই চার বছরে দেশে স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়েছে ২০ গুণ। ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনের দামও অনেক কমে এসেছে। ২০১২ সালে সর্বনিম্ন দামের একটি স্মার্টফোনের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা, এখন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যেই একটি স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যায়। আগামী দুই বছরে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকাতেই দেশের বাজারে স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিএমপিআইএর মহাসচিব রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরই দেশে স্মার্টফোনের বাজার বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে ২০২০ সালে দেশে স্মার্টফোনের বাজার এমনিতেই ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। জিএসএমএর গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আরও বাড়বে, যদি এ ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ও কর হার কমানো হয়। বাংলাদেশে একটি মুঠোফোন আমদানিতে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সারচার্জসহ ২৩ শতাংশ কর হিসাবে দিতে হয়। মুঠোফোন আমদানিতে এসব শুল্ক কমলে সাধারণ মানুষের স্মার্টফোন প্রাপ্তি আরও সহজ হয়ে আসবে। স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল ডিভাইসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের গুরুত্বের বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। অর্থ লেনদেন, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, মূল্য পরিশোধের মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে মুঠোফোনের ব্যবহার বাড়লে তা একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করে জিএসএমএ। জিডিপিতে মুঠোফোন অর্থনীতির অবদান বাড়াতে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাবনাও দিয়েছে জিএসএমএ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের কর হার কমানো, সিম প্রতিস্থাপন করের মতো বিষয়ের দ্রুত সমাধান, মোবাইলভিত্তিক আর্থিক সেবা খাতে ব্যবসায়িক সমতা নিশ্চিত করা, সব মোবাইল অপারেটরের জন্য সমান সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।

Source