খবরের শিরোনামঃ ফোরজির তরঙ্গ নিলামে সক্রিয় সিন্ডিকেট

খবরের তারিখঃ ২০১৬-০১-০২

-ঢাকা রিপোর্ট প্রতিবেদক:
দেশের টেলিকম খাতের একটি সিন্ডিকেট বড় আকারের মুনাফার লক্ষ্যে ফোরজির তরঙ্গ (৭০০ ব্যান্ডের মেগাহার্টজ) নিলাম সক্রিয় রয়েছে। সারাদেশে এখনো থ্রিজি সেবাই চালু হয়নি। এমনকি থ্রিজির জন্য বরাদ্দকৃত তরঙ্গের মধ্যে এখনো ১৫ মেগাহার্টজ এখনো অবিক্রিতই রয়ে গেছে। যার আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫শ’ কোটি টাকাও বেশি। এরই মধ্যে ফোরজির তরঙ্গ নিলাম করা নিয়ে বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্যে নেমেছে টেলিকম খাতের একটি সিন্ডিকেট। তাতে চক্রটির উদ্দেশ্য সফল হলে সরকারের গচ্চা যাবে প্রায় ১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি ফোরজি তরঙ্গ নিলামের অবৈধ কর্মকা-ের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আর তাদের সাথে রয়েছে টেলিকম সেক্টরের কিছু ব্যবসায়ী, মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য বড় ধরনের বাজেটও তৈরি করেছে ওই সিন্ডিকেট। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দ্রুততার সাথে ফোরজি তরঙ্গ নিলামে ওঠানোর ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি সক্রিয় রয়েছে। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তেেপ কিছুদিন তা বন্ধ থাকে। এখন আবার ওই সিন্ডিকেট গোপনে নিলামের কাজ শুরু করেছে। এর আগেও বিভিন্ন নিলাম এবং তরঙ্গ বণ্টন নিয়ে বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। তখন নামমাত্র নিলামে ৫ হাজার কোটি টাকার থ্রিজি তরঙ্গ ৪টি মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে বিক্রি করা হয়। তার আগে একটি কোম্পানিকে ফ্রি তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ায় সরকারের তি হয়েছে ১২শ’ কোটি টাকা। তারও আগে বিনামূল্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের টুজি তরঙ্গ ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি তি হয়। সূত্র জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফোরজি তরঙ্গ ব্যবহারের জায়গা তৈরি না করেই তড়িঘড়ি করে তা নিলামে তোলার মরিয়া চেষ্টা করছে অসাধু চক্র। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে একটি প্রভাবশালী মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি। ওই কোম্পানির উদ্দেশ্য ফোরজি সেবার নামে দাম বাড়ার আগেই ৭শ’ মেগাহার্টজের তরঙ্গ হস্তগত করা। কারণ আগামী ৩/৪ বছরেই এর দাম ২শ’ থেকে ৩শ’ গুণ বাড়বে। তাছাড়া বাজারে যাতে অন্য কোনো অপারেটর আসতে না পারে সেজন্যও সিন্ডিকেটটি দ্রুত ফোরজি তরঙ্গ কিনে নিতে চাইছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে- তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) অবশিষ্ট তরঙ্গের (১৫ মেগাহার্টজ) নিলাম করার আগে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) নিলাম ডাকা হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। যার পরিমাণ ১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া যদি শিগগিরই ৭শ’ মেগাহার্টজের নিলাম শেষ করে ফেলা হয় তাহলে মোবাইল ফোন অপারেটররা থ্রিজি সেবার জন্য যে ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করছে তা কিনতে আগ্রহী হবে না। একই সাথে তরঙ্গ ক্রয় করেও ফোরজি সেবা না দিয়ে তা ফেলে রাখবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত দেশের প্রতিটি প্রান্তে থ্রিজি নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়ার দিকে মনোযোগ দেয়া। যাতে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এ সুবিধা পায়। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরদের এখন লংটার্ম এভ্যুলেশন (এলটিই) বা চতুর্থ প্রজন্মের সেবার জন্য অনুমতি দেয়া হলেও তারা এখনই সে প্রযুক্তি চালু করবে না। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত এলটিই বা ফোরজি প্রযুক্তি চালুর আগে থ্রিজি নেটওয়ার্ক বিস্তারে উদ্যোগ নেয়া। সূত্র আরো জানায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এদেশে থ্রিজি নিলাম হয়েছিল। তখন মোট ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের মধ্যে প্রতি মেগাহার্টজ ২১ মিলিয়ন ডলার দামে ২১০০ ব্যান্ডের ২৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ক্রয় করে ৪টি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর। আর সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক বরাদ্দ পেয়েছিল ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। তিনটি ব্লকে বিভক্ত ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এখনো অবিক্রীত রয়েছে। অবশ্য সরকার যদি প্রযুক্তি নিরপেতাকে সমর্থন করে তবে ৭০০ মেগাহার্টজের আর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু অপারেটররা যদি ফোরজির জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) তরঙ্গ ব্যবহার শুরু করে তবে বিশাল সংখ্যক গ্রাহককে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন হ্যান্ডসেট কিনতে হবে। যা অধিকাংশ গ্রাহকের পইে সম্ভব হবে না। এদিকে টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ইতিমধ্যে সরকার ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (বিডব্লিউএ) অপারেটরের কাছে এলটিই বা ফোরজি লাইসেন্স ইস্যু করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের নিলাম শুধুমাত্র মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। যেখানে নিয়ন্ত্রকরা নতুনদের জন্য থ্রিজি নিলামে অংশ নেয়া এবং লাইসেন্স অর্জনের সুযোগ রেখেছে। তবে সরকার যদি মনে করে এলটিই/ফোরজি ঢিমেতালে এগোলে কোনো তি নেই তাহলে কিছু বলার নেই। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠির কথা চিন্তা না করে সরকারের উচিত দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাডহক ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করা। কারণ নতুন পরিস্থিতির সাথে বিডব্লিউও অপারেটরদের খাপ খাইয়ে নিতেও আরো সময় প্রয়োজন। এখন ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গকে সাধারণভাবে থ্রিজি ব্যান্ড হিসেবে বলা হলেও বিশ্বব্যাপী ফোরজি ব্যান্ড হিসেবেও পরিচিত। সরকার মোবাইল অপারেটরদের কাছে পুরো ২১০০ মেগাহার্টজ বিক্রি করার পরই অন্য ব্যান্ডগুলো নিয়ে ভাবা উচিত। যদিও ৭০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের পুরোটাই নিলামে উঠানো সম্ভব নয়। কারণ পুরো তরঙ্গটি ব্যবহারোপযোগী করতে রি-ফার্মিং প্রক্রিয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে ফোরজি নিলামের বিরোধিতা করে বিডব্লিউএ অপারেটররা বলছে- সেলুলার ফোন অপারেটরদের কাছে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তরঙ্গ রয়েছে এবং থ্রিজি তরঙ্গের বাকিটুকু কেনার আগে আরো অতিরিক্ত তরঙ্গ কেনার চেষ্টা নতুনদের বাজারে প্রবেশ ব্যাহত করবে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের তৃণমূল পর্যন্ত সংযোগ বাড়ানোর একটি নীতিমালা গ্রহণ করা। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণ প্রজš§ ঘরে বসেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। দেশের সুবিধা উপো করে কোনো সংস্থা বা ব্যক্তিকে সুবিধা দেয়া উচিত হবে না। সাধারণ মানুষ যাতে প্রযুক্তির সব ধরনের সেবা পেতে পারে সেজন্য সরকারের একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। যদি বাজার তৈরি করে এক বছর পর থ্রিজি তরঙ্গ বিক্রি করা হয় তাহলে আরো এক হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারবে সরকার। এখন ফোরজির বাজার তৈরির আগেই ৭০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামে বিক্রি করা হলে এ খাতে সরকারের তি হবে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া ফোরজির তরঙ্গ নিলামে ওঠানোর আগেই আইটিইউর (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) সাথেও পরামর্শ করা উচিত। পাশাপাশি এমন মূল্য ঠিক করতে হবে যাতে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের মূল্য থ্রিজির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়।

Source