খবরের শিরোনামঃ ইজারা ২০১০ কিলোমিটার, ভাড়া আদায় ১৬০০ কিলোমিটারের

খবরের তারিখঃ ২০১৬-০১-০৩

-ইসমাইল আলী ও সুমন আফসার
সারা দেশে রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক আছে ২ হাজার ১০ কিলোমিটার। নিজস্ব প্রয়োজন না থাকায় এর পুরোটাই ইজারা দেয়া। তবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের। এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রেলওয়ের তথ্যমতে, সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ১৯৮৯ সালে সারা দেশে ট্রেন লাইনজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। নরওয়ে সরকারের আর্থিক অনুদানে মেইন লাইন সেকশনে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। এতে ২ হাজার ১০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রেলওয়ের ৩০০ স্টেশন সংযুক্ত হয়। সক্ষমতার বড় অংশই অব্যবহূত ছিল সে সময়। এজন্য ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোনকে অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দেয় রেলওয়ে। তবে চুক্তি করা হয় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের জন্য। সে অনুপাতেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ইজারার অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালে রেলওয়ে প্রথম অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দেয়। ওই সময় চুক্তি করা হয় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের। অথচ অনুমোদন নেয়া হয় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটারের জন্য। যদিও প্রকৃতপক্ষে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে ২ হাজার ১০ কিলোমিটার। এতে বছরে ৮১ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সারা দেশে রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার রয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ কিলোমিটার। তবে প্রকল্পটির নাম ছিল ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার। তাই অডিট আপত্তি উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে সে তথ্য সঠিক নয়। তবে এর সঙ্গে একমত নন রেলওয়ের টেলিকম বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে গ্রামীণফোন জানায়, রেলওয়ের ২ হাজার ১০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ২০২৭ সাল পর্যন্ত ইজারা নেয়া হয়েছে। রেলওয়ের ইনফরমেশন বুকেও ২ হাজার ৯ কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার ইজারার কথা বলা হয়েছে। এদিকে বর্তমানে দেশে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে লাইসেন্স দেয়া হয় ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে। আর ২০১৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন প্রতিষ্ঠান— বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডকে এনটিটিএন লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। এনটিটিএন ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপন ও তা ব্যবসায়িকভাবে ভাড়া প্রদানের জন্য এনটিটিএন লাইসেন্স নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০১১-এর ধারা ৪০ অনুযায়ী, বিটিআরসির অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে পারে না। সরকারের পূর্ব অনুমোদনসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমতি দিতে পারে কমিশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়ার পর পুরনো চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে। ফলে সক্ষমতা অনুযায়ী, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকেই এ নেটওয়ার্ক ভাড়া দিতে বাধ্য রেলওয়ে। তবে লাইসেন্সের শর্ত না মেনে এখনো পুরনো চুক্তি বলবৎ রেখেছে রেলওয়ে। এজন্য বিটিআরসির কোনো ধরনের অনুমতিও নেয়া হয়নি। জানা গেছে, প্রতি মিটার অপটিক্যাল ফাইবারের মাসিক ভাড়া ২ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। রেলওয়ের কাছ থেকে নেয়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল লিজবাবদ প্রতি বছর ১০৬ কোটি টাকা ভাড়া প্রদান করছে গ্রামীণফোন। ১৯৯৭ সালে ভাড়া নেয়া ২ কোরের ক্যাবল গ্রামীণফোন পরবর্তীতে নিজ খরচে ৩২-৪৮ কোরের ফাইবার স্থাপন করে। এ হিসাবে রেলওয়ের কাছ থেকে নেয়া প্রতি মিটার অপটিক্যাল ফাইবারের জন্য মাসে গ্রামীণফোনের ব্যয় ৬৮ পয়সা। অথচ ২০১৩ সালে পিজিসিবি নিজস্ব প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার দুই এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশনকে লিজ দিয়েছে। এর মধ্যে ফাইবার অ্যাট হোম পেয়েছে ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার ও বাকি ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পেয়েছে সামিট কমিউনিকেশন। মাসে প্রতি মিটার ক্যাবলের জন্য ভাড়া হিসেবে প্রতিষ্ঠান দুটি প্রায় ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে দিচ্ছে। মো. আমজাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মধ্যে গ্রামীণফোনকে অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দেয়া হয়েছে। তখন অন্য কেউ এর চেয়ে বেশি দাম দিতে রাজি হয়নি।

Source