খবরের শিরোনামঃ বিদেশি কলরেটে নৈরাজ্য

খবরের তারিখঃ ২০১৬-০১-০৬

-
আন্তর্জাতিক কল থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ে ধস নামার খবরটি উদ্বেগজনক। বিদেশি কলের চোরাকারবার বন্ধ করে রাজস্ব আয় সুরক্ষিত করার সরকারি চেষ্টা গত ১৪ বছরেও সফল হয়নি। একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং মাঝখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগী কিছু মহল ফায়দা লুটে নিচ্ছে। স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরদের সংগঠন আইওএফের ‘নেটওয়ার্ক টপোলজি মডেল’। তবে এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে টিআর-১ ও টিআর-২ নামের দুটি স্তর সৃষ্টি করে একটি মহলকে লুটপাটেরও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। মডেলটি লাইসেন্সিং বিধিবিধানের সঙ্গেও অসংগতিপূর্ণ। রেট কমলে কল ও রাজস্ব দুটিই বাড়বে, কমে আসবে ভিওআইপি—আইওএফের এই পরামর্শ শুনে সরকার কলরেট পরীক্ষামূলক তিন সেন্ট থেকে দেড় সেন্টে নামিয়ে আনে। এরপর কল ও রাজস্ব দুটিই বাড়ে। তারপর হঠাত্ কেন দেড় সেন্ট থেকে দুই সেন্ট রেট করতে হবে? রেট বাড়ায় গেটওয়ে অপারেটরদের হিসাবে এখন দিনে প্রায় তিন কোটি টাকা বেশি জমা হচ্ছে, আর কল কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। এটা রীতিমতো নৈরাজ্য। এই পরিস্থিতিতে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলো উদ্বিগ্ন। তারা বলছে, আইওএফ মডেল বিষয়ে সরকারের সব সিদ্ধান্ত লাইসেন্সিং নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে এবং সংশোধনের খসড়া পাঠিয়েছে বলে গতকাল কালের কণ্ঠ’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়। আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা হচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আয় সুরক্ষিত করা, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও অবৈধ কল আদান-প্রদান বন্ধ করা। তবে রাজস্ব ভাগাভাগির ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েই গেছে। বিদেশি কলাররা বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ শোধ করেন। কথা ছিল সরকারকেও ডলারেই রাজস্ব আয়ের ভাগ দেওয়া হবে। তবে তা মানা হচ্ছে না। উদ্দেশ্য ছিল ভিওআইপি বন্ধ করা। এ কাজেও সাফল্য আসেনি। এবার খোদ আইওএফ কলরেট দেড় সেন্ট থেকে দুই সেন্ট করে কালোবাজারিদের কার্যত উসকে দিল। রাষ্ট্র ও গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিযোগাযোগের মতো একটি খাতে স্থিতিশীলতা আনতে না পারা বড় ব্যর্থতা। বেসরকারি খাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া মানেই কোনো সিন্ডিকেটের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া নয়। এই খাতে কার্যত তা-ই হয়েছে। বিদেশি ফোনের কলরেট দ্রুত নির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী করতে হবে। বিটিআরসি যেসব সংশোধনীর সুপারিশ করেছে সেগুলো দ্রুত মূল্যায়ন করে সে অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করছি, আয়বণ্টনের আইওএফ মডেলটি খতিয়ে দেখা হবে এবং নিশ্চিত করা হবে রাষ্ট্র ও গ্রাহকের স্বার্থ।

Source