-এম. মিজানুর রহমান সোহেল
দেশে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তনের সুবিধা চালু করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত আশার আলো ফুটতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ বিষয়ে আগ্রহ দেখালে বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসে। এরপর গত মাসে এমএনপি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এখন এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের পরে (আর্থিক বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তা চূড়ান্ত করার কাজ করবে। সূত্র জানিয়েছে, এমএনপি চালু হলে গ্রাহকের সুবিধা বাড়বে। তখন কোন অপারেটরের কি সুবিধা সেই সুবিধা গ্রাহকরা সুবিধামতো অপারেটর বদল করে নিতে পারবে। এমএনপি সুবিধা চালু করতে বিটিআরসি একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেবে বলে গত মে মাসে জানিয়েছে। এমএনপি সুবিধা চালুর বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সালের ১৩ জুন মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। নির্দেশনায় পরবর্তী ৭ মাসের মধ্যে এমএনপি চালু করতে বলা হয় এবং এমএনপি চালুর জন্য ৩ মাসের মধ্যে সব অপারেটরকে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে বলা হয়। কনসোর্টিয়াম পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে এমএনপি সিস্টেম গড়ে তুলবে যা কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজ করবে। বেঁধে দেয়া সময় গত বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হয় কিন্তু চালু হয় না এমএনপি। পরবর্তী সময়ে এমএনপি চালুর জন্য একই বছরের মে মাসে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয় বিটিআরসি। ওই কমিটিকে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি কাজের জন্য কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে আগস্ট মাসে প্রতিবেদন দেয়। সেটি ছিল অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে এমএনপি চালু করতে ৫ বছর সময় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। যখন অপারেটরদের টুজি লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছিল তখন গাইডলাইনে লেখা ছিল অপারেটররা মিলে এমএনপি চালু করবে। কিন্তু অপারেটররা সঠিক সময়ে এমএনপি চালু করতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে এমএনপি চালু করা সম্ভব না হওয়ার পেছনে অনেকে নীতিমালার কথা উল্লেখ করেন। তাদের অভিমত, নীতিমালায় এসব শর্ত থাকলে কেউ লাইসেন্স নিতে এগিয়ে আসবে না। অপারেটররাও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এমএনপি সেবা চালু করতে অনীহা প্রকাশ করে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও নীতিমালা সংশোধনের (নতুন করে তৈরি) উদ্যোগ নেয়া হয়। কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক কভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েসের নিুমান, গ্রাহক সেবার অসন্তুষ্টিই এই এমএনপি সেবার ধারণাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রহণ করেছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিটিআরসি জানিয়েছে, এমএনপি চালু করতে নতুন গাইডলাইন তৈরি করে সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পেলেই এমএনপির টেন্ডার এবং লাইসেন্স দেয়া হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এমএনপি অপারেট করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০১৩ সালে অপারেটরদের এমএনপি সুবিধা বাস্তবায়ন করার বিষয়ে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০ টাকার বেশি নিতে পারবে না। ৭ মাসের মধ্যেই গ্রাহকদের এ সুবিধা দিতে হবে। আর অনুমোদিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স ফি ১ কোটি টাকা। বার্ষিক ফি ৫০ লাখ টাকা। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিকে লাইসেন্স পাওয়ার দ্বিতীয় বছর থেকে সরকারের সঙ্গে আয়ের সাড়ে ৫ শতাংশ রাজস্ব শেয়ার করতে হবে। শতভাগ বিদেশী মালিকানার কোনো কোম্পানি নিলামে অযোগ্য হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান, ইউরোপ, আমেরিকাতে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চালু রয়েছে।
Source