-নিজস্ব প্রতিবেদক
অনুমোদনহীন টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ ও তা ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিটিআরসিকে এ নির্দেশ দেয়া হয় বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অননুমোদিত অবকাঠামো ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার বন্ধে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে এমন অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে তিন প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক, ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস ও বিডিলিংক কমিউনিকেশনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অনুমোদন ছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন, পরিচালনা ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান তিনটির কাছে পৃথক নোটিসে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট বণিক বার্তায় ‘টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর অনুমোদনহীন ব্যবহার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পর এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে কমিশনের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
জানা গেছে, ওই তিন প্রতিষ্ঠানকে ১০ দিন সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেসকে আরো একটি চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
লাইসেন্সবিহীন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই চলতে পারে না। খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসব বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগ থেকে সেলফোন অপারেটর বাংলালিংককে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজস্ব অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে। একই ধরনের চিঠি দেয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেডকে। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন ছাড়াই সেলফোন অপারেটর সিটিসেলের (প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড) কাছ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় অপটিক্যাল ফাইবার লিজ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইটিসি ও ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বিডিলিংক কমিউনিকেশন লিমিটেডের কাছেও ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটি নাটোর, পাবনা, টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় অনুমোদন ছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর ধারা ৩৫ অনুযায়ী দেশে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন, পরিচালন বা ওই ব্যবস্থার কোনো স্থাপনা নির্মাণ করবেন না; বাংলাদেশে বা বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে টেলিযোগাযোগ সেবা দেবেন না; ইন্টারনেট সেবার স্থাপনা নির্মাণ বা যন্ত্রপাতি স্থাপন কিংবা ওই স্থাপনা বা যন্ত্রপাতি পরিচালনা করবেন না। আর এ বিধানের লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
Source