-ফারুক হোসাইন :
লাইসেন্স পাওয়ার সাড়ে তিনবছর পরও কার্যক্রম শুরু করেনি ১১ ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটর। এদের মধ্যে দুটি অপারেটর সাময়িক অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলেও দেড়বছর ধরে সে দুটিও বন্ধ রয়েছে। অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে ৬ অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। লাইসেন্সিং নীতিমালা ভঙ্গ করায় বাতিল করা হতে পারে তাদের লাইসেন্সও। বিটিআরসি’র এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এই ৬ অপরেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একইসাথে কেন এসব অপারেটর লাইসেন্স পাওয়ার পরও অপারেশন শুরু করেনি তা খুঁজে বের করতে দুই সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাইসেন্সিং নীতিমালা অনুযায়ি লাইসেন্স পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে হয়। কিন্তু এসব অপারেটর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কমিশনের ১৮৫তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এসব অপারেটর কেন কার্যক্রম শুরু করেনি তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে কমিশন থেকে চিঠি দেয়া হয়। এমনকি ৩০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর সময়ও বেধে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অপারেটর চিঠির জবাব দিলেও ছয়টি অপারেটর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। ফলে কমিশন ওই ছয় অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই ছয় অপারেটর হলো- করোনেট কর্পোরেশন, এ্যাক্সাবাইট লিমিটেড, আইটেল, ম্যানেজওয়েল কমিউনিকেশন, পীরেক্স নেটওয়ার্কস ও ভ্যালোসিটি নেটওয়ার্কস। বিটিআরসি’র দেয়া তথ্য অনুযায়ি, ২০১২ সালের ১২ মার্চ ৩৪টি আইআইজি লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ওই সময়ে লাইসেন্স পাওয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করলেও দীর্ঘ সাড়ে তিনবছর ধরে কোন ধরনের কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি ৯টি অপারেটর। আর দুটি অপারেটর সাময়িকভাবে কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দেড়বছর ধরে। এই ১১ অপারেটরের মধ্যে বাংলাফোন লিমিটেড, করোনেট কর্পোরেশন লিমিটেড, এ্যাক্সাবাইট, এফএম স্পেকট্রাম টেলিকম, ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস সিস্টেমস এন্ড সলিউশনস, আইটেল, ম্যানেজওয়েল কমিউনিকেশন, পীরেক্স নেটওয়ার্কস, ভ্যালোসিটি নেটওয়ার্কস, আবির টেলিকমিউনিকেশন ও স্কাইটেল কমিউনিকেশন লিমিটেড। লাইসেন্স পাওয়ার পর সাময়িক কার্যক্রম শুরু করে আবির টেলিকম। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৪ সালের ১ আগস্ট থেকে তা বন্ধ রেখেছে এই অপারেটর। অপর অপারেটর স্কাইটেল কমিউনিকেশন ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বন্ধ রেখেছে। বিটিআরসি’র নীতিমালা অনুযায়ি লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে অপারেশন শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমনকি রোল আউট করে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক বিস্তারের ক্ষেত্রেও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে অপারেশন শুরু করতে না পারা এবং রোল আউট টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ব্যাংক গ্যারেন্টি থেকে ১০ শতাংশ হারে মোট ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়ার বিধান রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব অপারেটরের ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে ৫০ হাজার টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, লাইসেন্স পাওয়ার পর অপারেশনাল কার্যক্রম চালু না করায় এসব প্রতিষ্ঠান আইআইজি গাইডলাইন এর ক্লজ ১৪ ও লাইসেন্সিং শর্ত ১৩ ভঙ্গ করেছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং লাইসেন্স বাতিল করা হবে না তা জানিয়ে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম শুরুর জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে সময় চেয়েছে। যদিও এই ১১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক লাইসেন্স ফি পরিশোধ করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের দুই বছরের লাইসেন্স ফি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের এক বছরের লাইসেন্স ফি বকেয়া রয়েছে।
Source