খবরের শিরোনামঃ দাম বাড়ায় আন্তর্জাতিক ইনকামিং বৈধ কলে ধস

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১০-১১

-যাযাদি রিপোর্ট
কলরেট বাড়ানোয় বৈধ পথে দেশে আসা ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) কলে ধস নেমেছে। বর্তমানে বৈধ পথে দেশে আসছে মাত্র ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি মিনিটের মতো কল। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই তা ৫ কোটি মিনিটে নেমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। অথচ এই কলরেট অর্ধেক করা হলে ইনকামিং কল বৃদ্ধি পেয়ে তা ১২০ মিলিয়ন বা ১২ কোটি মিনিট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যদিও এই কলরেট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বৃদ্ধি করেনি। করেছে দেশে আইজিডবিস্নউগুলোর (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) সংগঠন আইওএফ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম) এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে এ ধরনের অনুমোদন কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিকে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বৈধ পথে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বৃদ্ধি করতে প্রতি মিনিট ৩ সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়। ৬ মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও ৬ মাস শেষে তা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চলবে বলে জানায় বিটিআরসি। ওই সময়কালে দেশে বৈধ পথে আসা কল পৌঁছে গিয়েছিল প্রতিদিন ১২ কোটি মিনিটে। এদিকে আইওএফ হঠাৎ করেই ২৪ আগস্ট কলরেট দেড় সেন্ট থেকে ২ সেন্ট করে। মূলত ওইদিন থেকেই ইনকামিং কল কমতে থাকে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২৪ আগস্টের আগে কল আসত ১০ কোটি ৪৪ লাখ মিনিটের মতো। গত মাসের প্রথম দিকেও কলের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৮৮ লাখ মিনিট। আর গত ৫-৬ অক্টোবর কল নেমে যায় ৭ কোটি মিনিটে। প্রতিদিন এভাবেই নামছে। বৈধ পথে কল কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, 'আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিগগিরই আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় কলরেট বাড়ায়নি। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এ সিদ্ধান্ত বিটিআরসির। বিটিআরসি এটিতে অনুমোদন দিয়েছে।' বিষয়টি জানতে এবং এ বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের অনুমোদন বিটিআরসি দিতে পারে কিনা এর যৌক্তিকতা, রাজস্ব কমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলরেটেরও একটি সিলিং রয়েছে। বিটিআরসি সেই সিলিংয়ের মধ্যে থেকে অনুমোদন দিয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও বিটিআরসির এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মন্ত্রণালয় থেকে এনওসি নিতে হয় কিনা সে ব্যাখ্যাও জানতে চাওয়া হয়েছে। বিটিআরসির জবাব পেলে আমরা এ বিষয়ে যৌক্তিক ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।' এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দেশে ২৯টি আইজিডবিস্নউ থাকলেও এই অপারেটরগুলোর সংগঠন আইওএফ সাতটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় কর্তৃত্ব করছে। এই ৭ প্রতিষ্ঠানের অধীনে (টপোলজি) গিয়ে আইজিডবিস্নউগুলোকে কর্তৃত্ব করার অনুমোদন দিয়েছে খোদ বিটিআরসিই। ওই ৭টি প্রতিষ্ঠান হলো ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স, রুটস কমিউনিকেশন্স, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক ও নভো টেলিকম। বৈধ পথে কল আসা কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে। গত এক বছরে বৈধ পথে কল কমে যাওয়ার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মিনিট। এমনিতেই কলরেট কমানোয় সরকারের রাজস্ব ভাগাভাগির অনুপাতও কমায় সরকার। ফলে কল এবং রাজস্ব ভাগাভাগির অনুপাত কমে যাওয়ায় সরকারের ক্ষতি হলেও তাতে লাভবান হয়েছে আইজিডবিস্নউগুলো। তারা নিজেদের কলরেট বাড়ালেও রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। কলরেট বাড়ানোর পরও এখন ইনকামিং কলের রাজস্ব ভাগাভাগি হচ্ছে- ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ২০ শতাংশ আইজিডবিস্নউ, ১৭.৫ শতাংশ আইসিএক্স ও ২২.৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অপারেটর বা একসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস বা এএনএস-এই হারে।

Source