-আইটি ডেস্ক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৫০ শতাংশ বেড়ে ১৩৬ দশমিক ৪৫ জিবিপিএসে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৯১ দশমিক ১২ জিবিপিএস। সংশ্লিষ্টদের মতে, বছর শেষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সরবরাহ করা ব্যান্ডউইথের ব্যবহার আরও বেড়ে ২০০ জিবিপিএস হবে। সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির এক বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের হার অনেক বাড়লেও এর সামগ্রিক ব্যবহার নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং গবেষকদের মধ্যে। তাদের মতে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজে খুব কমই ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তির এ সুবিধা। বরং ইন্টারনেট ডেটা হিসেবে এর যতটা ব্যবহার হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ চলে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, থ্রিজি চালু, ব্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস, ইন্টারনেট সেবার গ্রাহক বৃদ্ধি, সরকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালুর ফলে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে। ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, জুনের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে মোট ব্যবহার ইতিমধ্যে দেড়শ’ জিবিপিএস ছাড়িয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জুনে তাদের ব্যবহার ছিল ৩৩ দশমিক ৫ জিবিপিএস। এখন তা ৪৪ জিবিপিএস হয়ে গেছে। মূলত দাম কমানোর কারণেই তাদের সরবরাহ করা ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এতটা বেড়েছে। দেশে সাবমেরিন ক্যাবলের বাইরেও ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে থাকে ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) প্রতিষ্ঠান। এ কোম্পানিগুলো ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ এনে বিক্রি করে থাকে।
বিটিআরসির হিসাব অনুসারে, জুন পর্যন্ত এ কোম্পানিগুলো সরবরাহ করেছে ১০৩ জিবিপিএসের বেশি। এটি মোট ব্যান্ডউইথ চাহিদার ৭৫ শতাংশ। আর বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে ৩৩ জিবিপিএস, যা বছর শেষে ছিল ২৪জিবিপিএস।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, আইটিসিগুলোর মধ্যে ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স ৩৪ জিবিপিএস সরবরাহ করছে, যা গত বছরের শেষে ছিল ২৩ জিবিপিএস। এর বাইরে ফাইবার অ্যাট হোম জুনের শেষে দিয়েছে ২৮ জিবিপিএস, যা গত বছরের শেষে ছিল ১৭ জিবিপিএস। ম্যাঙ্গো টেলি সার্ভিসেস ডিসেম্বর শেষে ১০ জিবিপিএসের বিপরীতে জুনে ১৩ জিবিপিএস বিক্রি করেছে। সামিট কমিউনিকেশনসের বিক্রির পরিমাণ জুনে ছিল ১৪ জিবিপিএস ও ডিসেম্বরে ৭ জিবিপিএস। নভোকম জুনে ৮ জিবিপিএস সরবরাহ করলেও ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ৩ জিবিপিএসে। অন্যদিকে বিডি লিংক কমিউনিকেশন এখন ২ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করলেও গত বছরের শেষে তারা দিয়েছিল ১ দশমিক ২ জিবিপিএস।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ব্যান্ডউইথের চাহিদা। ২০০৮ সালে ব্যান্ডউইথের চাহিদা ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস। পরের বছর প্রায় ৮ জিবিপিএস, ২০১০ সালে ১৫ জিবিপিএস ও ২০১১ সালে প্রায় ২৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত বিএসসিসিএল ছিল স্থানীয় বাজারে ব্যান্ডউইথের একমাত্র জোগানদাতা। পরে ২০১২ সালে আসে আইটিসি কোম্পানিগুলো। আর তখন থেকেই ভারত থেকে দেদারসে কম দামে ব্যান্ডউইথ আসতে থাকে। ফলে ব্যান্ডউইথের চাহিদাও বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথের দাম কমানোও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। ২০০৮ সালে দেশে প্রতি মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা।
গত বছর এপ্রিলে তা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ টাকা। এ বছরের সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে যায়। অন্যতম শীর্ষ আইটিসি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দামে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে আইটিসিগুলো। বিএসসিসিএলের তুলনায় কম দামে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করায় এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক বাড়ছে। তার মতে, বছর শেষ হতে হতে দেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ২০০ জিবিপিএসের কাছাকাছি চলে আসবে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট সেবার সংযোগ আছে ৫ কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার। ব্যান্ডউইথের দাম আরও কমলে তা ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সবাই ।
Source