-বণিক বার্তা ডেস্ক
রাশিয়াভিত্তিক সিস্টেমার ভারত ইউনিট কিনে নিচ্ছে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স (আরকম)। গত সোমবার এ তথ্য জানান রিলায়েন্স প্রধান অনিল আম্বানি। নতুন এ চুক্তির আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত না জানালেও রিলায়েন্সে সিস্টেমার ১০ শতাংশ শেয়ার থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতে এমটিএস নামে ব্যবসা করছে সিস্টেমা। খবর এনডিটিভি।
নতুন চুক্তির অধীনে রিলায়েন্সের পরিচালনা পর্ষদের কোনো পদ পাচ্ছে না সিস্টেমা। এমনকি কোনো সিদ্ধান্তে ভেটো দেয়ারও ক্ষমতা থাকছে না তাদের। তবে সিস্টেমার হয়ে আগামী ১০ বছর স্পেক্ট্রামের জন্য প্রতি বছর ৩৯২ কোটি রুপি সরকারকে দেবে রিলায়েন্স। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আরকম নতুন চুক্তির মাধ্যমে বার্ষিক দেড় হাজার কোটি রুপি রাজস্ব পাবে। আর তাদের নেটওয়ার্কে যোগ হবে নতুন ৯০ লাখ গ্রাহক।’ পাশাপাশি সিস্টেমার ৮০০/৮৫০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেক্ট্রামও কিনে নেবে রিলায়েন্স। এ স্পেক্ট্রাম ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবা সরবরাহের উপযোগী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সেবা সরবরাহে রিলায়েন্সের সক্ষমতা বাড়বে বলেই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। নতুন চুক্তির মাধ্যমে ভারতের আটটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ৮০০/৮৫০ মেগাহার্টজের স্পেক্ট্রাম সরবরাহে রিলায়েন্সের মেয়াদ বাড়ছে ১২ বছর। বাড়তি মেয়াদ ২০২১-৩৩ সাল পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। দিল্লি, গুজরাট, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা, কলকাতা, উত্তর প্রদেশ (পশ্চিম), পশ্চিমবঙ্গে স্পেক্ট্রাম সরবরাহে রিলায়েন্সের মেয়াদ বাড়তে যাচ্ছে।
নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সিস্টেমা তাদের বিদ্যমান ঋণ পরিশোধ করবে বলে জানা যায়। ফলে রাশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির কোনো ঋণভারই গ্রহণ করতে হচ্ছে না রিলায়েন্সকে।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগে রিলায়েন্স ও সিস্টেমার একত্রে সেবা সরবরাহের সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা এয়ারসেলেরও। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, একত্রে সেবা সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের ব্যয় কমাতেই আগ্রহী হচ্ছে।
এয়ারসেল, রিলায়েন্স ও সিস্টেমা মিলে একটি বৃহৎ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এমটিএসকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে সে পরিকল্পনারই প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আগের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে আরকমের সঙ্গে এমটিএস একত্রিত হবে। এ বিষয়ে আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে বলেও সে সময় জানানো হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে এতে এয়ারসেল যোগ হওয়ার কথা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ঋণের বোঝা কমানোই এখন মূল লক্ষ্য। আর এ কারণে একত্রিত সেবা সরবরাহের পাশাপাশি সম্পদ বিক্রির দিকেও তারা ঝুঁকছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণভার কমাতে সম্পদ বিক্রির পরিকল্পনা করছে। আরকমের কথা উল্লেখ করে সূত্রটি আরো জানায়, টাওয়ারসহ বিভিন্ন ব্যবসা বিক্রি করে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স ৩৮ হাজার কোটি রুপি ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করছে। এদিকে এয়ারসেলও তাদের ফোরজি অবকাঠামো ভারতী এয়ারটেলের কাছে বিক্রির বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০ হাজার কোটি রুপির ঋণ বড় বোঝা হয়ে আছে বলেই জানানো হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এয়ারসেল বা আরকম থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টির সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, আরকমের মূল উদ্দেশ্যই হলো তরঙ্গ শেয়ার করে সেবা সরবরাহ করা। একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে নতুন প্রতিষ্ঠানে এয়ারসেলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সিসের দখল থাকবে ৩৫-৪০ শতাংশ। অনিল আম্বানির প্রতিষ্ঠান আরকমের দখল থাকবে ৩০ শতাংশের কম। আর রাশিয়াভিত্তিক সিস্টেমার দখলে থাকবে ১০ শতাংশেরও কম। নতুন প্রতিষ্ঠানের বাকি অংশ আরকমের শেয়ারহোল্ডারদের দখলে থাকবে। উল্লেখ্য, অনিল আম্বানি ও তার পরিবারের সদস্যদের দখলে রয়েছে আরকমের ৬০ শতাংশ শেয়ার।
ধারণা করা হচ্ছে, রিলায়েন্সের সঙ্গে এমটিএস একত্রিত হওয়ায় আগের পরিকল্পনাটির একাংশ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। তবে এয়ারসেলের সঙ্গে মিলে একত্রভাবে সেবা সরবরাহের বিষয়টি এখনো কোনো পক্ষই পরিষ্কার করেনি। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রিলায়েন্স ও এমটিএসের সঙ্গে এয়ারসেল মিললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
Source